আল্লাহ তাআলা কার দোষ খোঁজেন?

শাহনূর শাহীন, আলেম ও সাংবাদিক
 | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:৫৭

আল্লাহ তাআলা কি বান্দার দোষ খোঁজেন? বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও উত্তর হবে ‘হ্যাঁ’। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে আল্লাহ তাআলার কি কারো দোষ খোঁজার প্রয়োজন আছে? উত্তর হবে ‘না’। তাহলে কেন বলা হবে আল্লাহ কারো দোষ খোঁজেন? নিশ্চয়ই এর অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন হলেন আলিমুল গাইব। তিনি সবকিছু দেখেন এবং জানেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা এবং সর্বজ্ঞানী। তারপরও তিনি বান্দার দোষ খোঁজেন বলার অর্থ বান্দার অতি সাধারণ ভুলগুলোও ক্ষমা না করে শাস্তি প্রদানের হুঁশিয়ারি এবং জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দেওয়া। জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কারণ এটাই যে, মানুষ অন্যের দোষ তালাশ করে মানুষের কাছে বলে বেড়ানো এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে বিব্রত, অপদস্ত ও হেয় করার উদ্দেশ্যে।

সামাজিক লেনদেনে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে আমরা অনেকের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি প্রায় সময় এড়িয়ে যাই। ত্রুটির মাত্রা বা ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে সতর্ক করি কিংবা শাস্তির মুখোমুখি করি। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কাউকে পছন্দ না হলে মুখিয়ে থাকি তার দোষ ধরার জন্য। সেটা হোক কর্মক্ষেত্রে কিংবা সংসার ও সমাজ জীবনে। এক্ষেত্রে অধিকাংশই ছোটো ছোটো ভুলগুলোকেও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অন্যের সামনে উপস্থান করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অপদস্ত করার চেষ্টা করি।

বাস্তবতা হলো সমাজের অধিকাংশ মানুষের মাঝেই অন্যের দোষ তালাশের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। আমরা সাধারণত নিজের দোষ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু বিপরীতে অন্য কারো দোষ খুঁজতে পছন্দ করি। কারো ব্যাপারে নেতিবাচক কোনো কিছু শুনলেই তার পেছনে লেগে যাই। কেউ কেউ অন্য কারো নিন্দা করতে পেরে ভিষণ আনন্দিত হয়। নৈতিকভাবে বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়। ইসলামেও রয়েছে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعُ اللَّهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ

‘তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের (অন্যের) দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহ তাআলাও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন’। আবু দাউদ-৪৮৮০.

এছাড়াও সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় আরেক হাদীসে আছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ধারণা সম্পর্কে তোমরা সাবধান হও। কারণ অলীক ধারণা পোষণ সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা পরস্পর গোয়েন্দাগিরি করো না, ঝগড়া-বিবাদ করো না, অসাক্ষাতে দোষচর্চা করো না, হিংসা ও ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দারা, সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।

মহানবীর (সা.) এই বাণী থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, কেউ কাউকে অপদস্ত করার উদ্দেশ্যে দোষ তালাশে মগ্ন থাকলে আল্লাহ তাআলা নিজেই ওই ব্যক্তিকে অপদস্ত করেন। আর আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেহেতু সর্বজ্ঞাতা; তার জন্য মানুষের দোষ উন্মুক্ত করা কোনো ব্যাপারই না। তিনি চাইলে যেকোনো মুহূর্তে আমাকে-আপনাকে অপদস্ত করতে পারেন। কেননা, আমরা প্রতিনিয়ত শত শত অন্যায় করি- লুকিয়ে এবং প্রকাশ্যে। আমাদের এত সব অন্যায় দেখেও আল্লাহ তাআলা অবকাশ দেন। তিনি চান বান্দাহ যেন, নিজের ভুল স্বীকার করে পাপ মোচনে প্রার্থনা করে। এজন্য তিনি বান্দাকে সময় দেন। কিন্তু কেউ যদি অন্য কাউকে অপমানিত করতে চায়, কাউকে ছোটো করতে চায়, সে নিয়তে দোষ তালাশে মত্ত হয়; তখন আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির এমন গোপনীয় দোষ মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেন যাতে সে চরম নিন্দনীয় এবং অপমানিত হয়।

অর্থাৎ কারো দোষ দোষ তালাশ করা যেমন অন্যায় এবং নিজের জন্য ক্ষতিকর তেমনি কারো ব্যাপারে ধারণাপ্রসূত বিদ্ধেষ লালন কিংবা অহেতুক ধারণা করাও অন্যায়। উভয়টি থেকেই আল্লাহ তাআলা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমন গর্হিত কাজকে মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষের মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণকারীর সঙ্গে তুলনা করে তিরস্কার করেছেন। পবিত্র কোরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাকো; কেননা কোনো কোনো ধারণা পাপ। এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে?’। আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবূলকারী। -সূরা হুজরাত- ১২

মানুষের দোষ অন্বেষণ করতে গিয়ে আমাদের আরও কিছু ক্ষতি হয়। নিজের মূল্যবান সময়, মেধা ও শ্রম অহেতুকভাবে ব্যয় হয়। যে সময়ে আমরা নিজের কোনো কাজ করতে পারি সেই সময়টাতে অন্যের দোষ তালাতে উন্মুখ হয়ে থাকলে সময়, শ্রম ও মেধা; উভয়ই অপব্যয় হয়। আর অপব্যয় করাও ইসলামে নিন্দনীয় পাপ। সূরা আনআমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। অপব্যয়কে যদি শুধু অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না রেখে চিন্তা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে কোনো ক্ষেত্রেই অপব্যয় করা উচিত নয়। এতে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত; উভয় দিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসব গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :