দুর্নীতি দমনে দুদককে সঠিক পথে আনার কাজ করবে সংস্কার কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৫| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৪
অ- অ+

ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ— টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তাকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রেক্ষাপটে দুদককে সংস্কারের বিষয়ে তিনি ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত কথা বলেছেন।

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কার্যকর করতে হলে এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুদকে এখন প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার খুব প্রয়োজন। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দুদকের পাশাপাশি সহযোগী হিসেবে যেসব সংস্থা কাজ করে সেগুলোরও সম্পূরক সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক পথে আনতে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন কাজ করবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট— বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআর, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট— সিআইডি, ইমিগ্রেশন অফিসসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমনে দুদকের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক দুদক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।

সেপ্টেম্বরে এই ছয়টি কমিশন পূর্ণাঙ্গ হবে। আর আগামী ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন হবে।

ঢাকা টাইমসকে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে গত ১৫ বছর দুদকে রাজনৈতিক নিয়োগ হয়েছে। দলীয় রাজনীতির প্রভাবের মধ্যে থাকতেন দুদক কর্মকর্তারা। যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও দুদক ব্যবস্থা নিয়েছে এরকম কোনো দৃষ্টান্ত রাখতে পারেননি।’

‘বরং যারা ক্ষমতার বাইরে এবং ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ বা কোনো কারণে ক্ষমতাসীন সরকারের রোষানলে পড়েছেন, তাদের জন্য লম্ফঝম্প হয়েছে। ফলে দুদকের যথাযথ কার্যকারিতা আমরা দেখতে পাইনি। কারণ, দুর্নীতি করা হয় ক্ষমতাসীন অবস্থায়। দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ক্ষমতাসীন অবস্থায় করতে হবে।’

দুদক আইনকে আরো যুগোপযোগী করা হলেই দেশে দুর্নীতির সংখ্যা কমে আসবে বলে আশাবাদী টিআইবির এ নির্বাহী পরিচালক। বলেন, সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশন তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে।

সংস্কার কমিশন গঠন অপরিহার্য ছিল উল্লেখ করে ঢাকা টাইমসকে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর আমরা বলে আসছি যে, রাষ্ট্রের অনেক কিছু ঢেলে সাজাতে হবে। এই ঢেলে সাজানোর গ্রহণযোগ্যতা এবং যথার্থতা নিশ্চিত করার জন্য কমিশন গঠন অবশ্যই ইতিবাচক।’

‘এই প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ করে সংস্কার করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো না। আমার সঙ্গে যারা কাজ করবেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশনের কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনের মতামত নিয়েই সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।’

ঢাকা টাইমসকে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশন দলীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে যাতে নিয়োগ না হয় সেদিকে অনুসন্ধান করে সংস্কারের জন্য কাজ করবে। এছাড়া প্রেষণে দলীয় বিবেচনায় রাজনৈতিক নিয়োগের বিষয়টিও তারা বিবেচনা করবেন।

‘দুদকের উচ্চ পর্যায়ে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে যারা ব্যক্তি জীবনে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত। আমরা দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি দুদকের আলাদা প্রসিকিউশন টিম রাখার বিষয়ে কাজ করবে সংস্কার কমিশন’— যোগ করেন সংস্কার কমিশন প্রধান।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এতদিন দুদক এবং দুদক সংশ্লিষ্ট কিছু আইন যেমন মানি লন্ডারিং আইন, কর আইন, সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টের কিছু ধারা, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তে পূর্বানুমতি লাগবে; এর মাধ্যমে কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।’

‘দুদকে কর্মকর্তাদের মাঝে দলীয়করণ-নির্ভর রাজনৈতিক চর্চা, দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রবণতায় পরিবর্তন আনতে সংস্কার করবো। এগুলো ঠিক করতে না পারলে দুদককে সেভাবে কার্যকর করা যাবে না।’

তবে দেশে দুর্নীতি রোধে দুদকের পাশাপাশি কমিশনের সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করাতে কি কি করণীয় তা নিয়ে আমরা কাজ করবো।’

‘কারণ এই সংস্থাগুলোর সহায়তা ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করা এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা দুদকের একার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই সংস্থাগুলোতে সম্পূরক সংস্কার আনার কাজ করতে হবে’— যোগ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ দিন: যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি গোটা বিশ্ব পরিচালনার দাবি
গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো অভিনেতা সিদ্দিককে
রংপুরে রোহিঙ্গা নারীকে জন্মনিবন্ধন দেওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত
৬০ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে আক্রমণ করতে পারে ভারত: আশঙ্কা পাক তথ্যমন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা