আখাউড়ায় বছর বছর ইউএনওর বাসা মেরামত, লাখ লাখ টাকা ব্যয়

হান্নান খাদেম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২১| আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৩০
অ- অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বাসভবনটি সরকারি অর্থ অপচয়ের এক ‘বাহানায়’ পরিণত হয়েছে। গত ৪ বছরে সাদা রংয়ের ডুপ্লেক্স ভবনটি ৫ বার মেরামত ও ২ বার রংকরণ কাজ করা হয়। এছাড়া বাসভবনের জন্য দুবার, অফিসের জন্য একবার আসবাবপত্র কেনা হয় এবং একবার রান্নাঘর মেরামত করা হয়েছে।

৪ বছরে এসব কাজে ৩৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল ও এডিপির আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

তবে এসব প্রকল্প ইজিপির মাধ্যমে প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে গোপনে কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বিধি অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন ঠিকাদার।

এক বছর আগে উপজেলা পরিষদের সভায় ভবনটি জরাজীর্ণ বিবেচনায় কনডেম (অকেজো) ঘোষণা করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে মতামত পাঠিয়েছিল। অথচ উপজেলা পরিষদই বাসাটি মেরামত ও রংয়ের কাজে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এলজিইডি অফিস ও একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জুন আখাউড়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন গাজালা পারভিন রুহি। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ইউএনওর বাসভবন রংকরণ, ওয়াশ রুম সংস্কার এবং পানির লাইন মেরামত প্রকল্প করে ৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা খরচ করা হয়। একই মাসে আরেকটি প্রকল্পে বাসভবনের আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়। দুটি প্রকল্পই কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ইউএনওর বাসভবন এবং বাসভবনের অফিসের জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়। এছাড়াও ইউএনর রান্নাঘর মেরামতে খরচ করা হয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৩১ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাসভবনের রংকরণ কাজে ব্যয় দেখানো হয় ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৭ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউএনওর বাসভবন ও গ্যারেজ মেরামতে ২১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ওই অর্থবছরে একাধিকবার বাসভবন মেরামত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ইউএনওর বাসভবন মেরামত ও রংকরণ কাজে খরচ করা হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ইউএনও ডুপ্লেক্স ভবনটির নিচ তলায় একটি ড্রইং, একটি ডাইনিং এবং উপরতলায় দুটি বেডরুম। একটি আলাদা রান্নাঘর রয়েছে। এক বছর আগে উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসাটি কনডেম ঘোষণা করার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসকের বরাবরে মতামত পাঠানো হয়েছিল।

ঠিকাদার গালিব ভূইয়া বলেন, প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি দিলে সব ঠিকাদার অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়, কাজে কম্পিটিশন বাড়ে এবং স্বচ্ছতা থাকে। কোটেশনে করলে সেখানে স্বচ্ছতা থাকে না।

এদিকে এক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের মতামতের প্রেক্ষিতে প্রায় এক বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে বাসা সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় আখাউড়া ইউএনওর বাসভবনটি অকেজো (কনডেম) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। সভার রেজুলেশনের একটি স্ক্যান কপি এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, টেন্ডার দিয়ে কাজ করাতে দেরি হয়। তাই কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়েছে। ১ বছর আগে বাসাটি অকেজো ঘোষণার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে মতামত পাঠানো হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজালা পারভিন রুহি বলেন, বাসভবনটি ড্যাম হয়ে গেছে। তাই রং করিয়েছি। তাছাড়া নতুন আসবাবপত্র ক্রয় করারও প্রয়োজন ছিল।

(ঢাকা টাইমস/০৬অক্টোবর/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা