প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কায় মৃৎশিল্পীরা
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। দেবী দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিককে আকৃতি দিতে রাত দিন পরিশ্রম করছেন তারা। দম ফেলারও যেন ফুসরত নেই তাদের।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে প্রতিমা তৈরির এসব চিত্র দেখা গেছে। কথা হয় বেশ কয়েকজন প্রতিমা কারিগরের সঙ্গে। তারা জানান, বিগত বছরের তুলনায় প্রতিমার চাহিদা কমে অর্ডার অর্ধেকে নেমে আসা এবং প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
রমনা কালী মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় বিবেক পাল নামে এক কারিগরকে। তিনি ১৪ বছর ধরে এখানে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। আলাপকালে ঢাকা টাইমসকে বিবেক বলেন, “প্রতিমা তৈরির মালামালের দাম বাড়ছে আর প্রতিমার দাম কমছে। আগে যেটা ১০ টাকা দিয়ে কিনেছি এখন সেই একই জিনিস ১৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। গত বছর যে প্রতিমার দাম ১ লাখ ছিল এবার সেই প্রতিমা ৭০ থেকে ৮০ হাজারে এসে দাড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “এবার আমাদের প্রতিমার অর্ডার কম। গতবছর আমদের ১২-১৩টা প্রতিমার অর্ডার ছিল। এবার কমে গেছে। মাত্র ১০টা অর্ডার পেয়েছি। দেশের এই পরিস্থিতির কারণে শুরুতে প্রতিমার অর্ডারই ছিল না। শেষের দিকে এসে অল্প টাকায় কিছু অর্ডার পেয়েছি।”
লাভের অংশ থেকে কারিগররা মজুরি পায় বলে জানান বিবেক পাল। তিনি বলেন, “মালিক অর্ডার ধরে আর আমরা কাজ করি। তারপর মাসিক হিসাব করে লাভের একটা অংশ আমাদের দেয়। কিন্তু প্রতিমার বর্তমান যে বাজার সেখানেতো কিছুই থাকবে না মালিকের। মালিকের যদি না থাকে তাহলে আমাদের কি দিবে? মালিক বাঁচলে আমরা বাঁচব।”
ঢাকা টাইমসের কথা হয় আরেক প্রতিমা কারিগর রতন পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দেশের বাজারে যে অবস্থা, এই পরিস্থিতিতে কোথাও পূজা হবে, কোথাও হবে না। শুধু মাত্র মণ্ডপগুলো ধরে রাখার জন্য গত বছর আমি যে মূল্যে কাজ করেছি এ বছর তার অর্ধেক মূল্যে কাজ করছি। গত বছর যে প্রতিমার কাজ আমি এক লাখ টাকায় করেছি এবার সেটা ৬০-৬৫ হাজার টাকায় করতে হচ্ছে।”
রতন পাল বলেন, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম প্রতিবছরের মতো এবারও কাজ হবে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মাঝে দেশে ঝামেলার কারণে এক মাসের বেশি সময় আমরা কাজ করতে পারি নাই। গতবারের মত এবার অর্ডারও নেই। গত বছর ১৬টা প্রতিমার কাজ করেছি। আর এ বছর ৯টা প্রতিমার কাজ করছি।”
প্রতিমা তৈরিতে খরচের তুলনায় প্রতিমার দাম নেই বলে আক্ষেপ করে রতন বলেন, “গত আড়াই মাস ধরে ছয়জন মানুষ এক সঙ্গে কাজ করছি। এর পর বাঁশ, কাঠ, মাটি, খড়সহ আরও তো কতকিছু আছে সবই তো নিজের খরচ। আমিনবাজার থেকে মাটি আমাদের ফিট হিসেবে কিনে আনতে হয়। ২০০ ফিট বেলে মাটির দাম পড়ে ছয় হাজার টাকা। এঁটেল মাটি কিনতে লাগে ১৫/১৬ হাজার টাকা। তারপর নিয়ে আসা খরচ আছে আরও। এক মুঠো বিচুলি (খড়) কিনছি ১১টাকা করে। এক মুঠো বিচুলি দিয়ে একটা হাতের কাজও হয় না। তারপর আবার ভ্যান ভাড়া আছে ৬০০ টাকা। এরপর রং খরচ, প্রতিমার সাজসজ্জা কেনার খরচ, আরও কত খরচ কিন্তু প্রতিমার দাম নেই।”
তিনি বলেন, “একই প্রতিমা গতবছর যেটা এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় করেছি এবার সেই প্রতিমা ৮০ হাজার টাকায় করতে হচ্ছে। একদিকে প্রতিমার দাম কম, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বেশি। গতবারের তুলনা এবার সবকিছুর যে দাম বেড়েছে আর প্রতিমার দাম কমেছে সেই হিসেবে এবার লাভতো পরের কথা আমাদের দিন হাজিরা মজুরিই তো থাকবে না। যাদের নিয়ে কাজ করছি তাদের বেতনই বা কিভাবে দিব নিজেইবা কীভাবে চলবো এটা নিয়ে হিমশিমের মধ্যে আছি।”
(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এমআই/এফএ)