আ.লীগের শরিক ও ছাড় পাওয়া আসনের প্রার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫২ | প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২

নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও স্বস্তিতে নেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শরিক দলের প্রার্থী আসন ছাড় পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের। এসব প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে আছেন। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনি সভা-সমাবেশ গণসংযোগ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যস্ত ছিলেন তারা।

আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া ৩২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নৌকা প্রতীকে জন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক নৌকা না পেলেও ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। এসব আসন থেকে নৌকার দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারপরও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এসব আসনে বিজয় হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের শরিক দলের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের পরাজিত হওয়ার আভাসও পাওয়া গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ সমঝোতায় ছাড় দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ঠিকই রয়ে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাড় পাওয়া আসনগুলোতে অর্ধেকের বেশি আসনেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন জাপা শরিক দলের প্রার্থীরা। এছাড়া যেসব আসনে সমঝোতা হয়নি সেখানেও জাপা বা অন্য দলের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা কম। সমঝোতায় ২৬টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন জাপার প্রার্থীরা। বাকিগুলোতে পিছিয়ে আছেন।

আসন ভাগাভাগিতে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন পেয়েছেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও স্বস্তিতে নেই রেজাউল। এখানে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন।

নীলফামারী- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে পাঁচজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফারুক কাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া নীলফামারী- আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমানকে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন।

গাইবান্ধা- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আব্দুর রশীদ সরকারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাঠে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর। এই আসনে হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

সাতক্ষীরা- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফুজ্জামান। আসনটিতে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। তাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী এখানে চ্যালেঞ্জের মুখে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে রাখছেন।

পিরোজপুর- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মাশরেকুল আজমের মুখোমুখি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী। এছাড়া আসনে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রার্থী মো. আশরাফুর রহমানের বড় ভাই ব্যবসায়ী মো. শামীম শাহনেওয়াজ।

ময়মনসিংহ- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফখরুল ইমামের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদ হাসান।

মানিকগঞ্জ- আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ।

হবিগঞ্জ- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী ফেনী- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করছেন। এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন।

চট্টগ্রাম- আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। বরিশাল- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আতিকুর রহমান।

বগুড়া- আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বর্তমান সংসদ সদস্য। এবার তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র ভোট করছেন বিএনপির সাবেক নেত্রী বিউটি বেগম।

রংপুর- আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান ওরফে রাঙ্গা। আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গঙ্গাছড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান।

ঢাকা-১৮ আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে। এই আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। আসনটি শেরিফা কাদেরের চেয়ে খসরু চৌধুরী এগিয়ে রাখছেন স্থানীয় ভোটাররা।

তবে ১০টি আসনে জাপা একার শক্তিতেই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ ১০ আসন সবকটিই রংপুর বিভাগের। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর গাইবান্ধা- আসন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

এছাড়া সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থী হয়েছেন ঠাকুরগাঁও- (হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ), রংপুর- (জি এম কাদের)। জিএম কাদেরের সঙ্গে লড়াই করছেন একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী, কুড়িগ্রাম- ( কে এম মোস্তাফিজুর রহমান), কুড়িগ্রাম- (পনির উদ্দিন আহমেদ), পটুয়াখালী- ( বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার), বগুড়া- (নূরুল ইসলাম তালুকদার), ময়মনসিংহ- (সালাহ উদ্দিন আহমেদ), কিশোরগঞ্জ- (মুজিবুল হক চুন্নু) নারায়ণগঞ্জ- ( কে এম সেলিম ওসমান)

১৪ দলীয় জোট নেতাদের ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছে।

বগুড়া- আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কে এম রেজাউল করিম তানসেন, রাজশাহী- আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, কুষ্টিয়া- জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বরিশাল - ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, পিরোজপুর- জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, লক্ষ্মীপুর- জাসদের মোশাররফ হোসেনকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পদধারী নেতা। তাই শরিক দলের নেতারা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করলেও পরাজিত হওয়ার শঙ্কা বেশি।

ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খসরু চৌধুরী বলেন, স্থানীয় ভোটাররা আমার পক্ষে আছে। কিছু কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ আছে, সেখানে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে লিখিত চিঠি দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিন বিজয়ী হবো।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রংপুর-৩ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী জি এম কাদের বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা বিজয়ী হবো। আমরা এই সরকারকে বিশ্বাস করে নির্বাচনে এসেছি, কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারিনি। এর আগের সব নির্বাচনে সরকার কারচুপি করেছে। এই নির্বাচনে যদি সরকার ভুল করে, তাহলে এর মাশুল দিতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/জেএ/বিবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আ. লীগের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি

প্রকাশ্যে ভোট: ইসিতে ক্ষমা চেয়ে দায়মুক্তি পেলেন এমপি হাফিজ

সরকারের উৎপাদন করার চেয়ে আমদানি করার চাহিদা বেশি: নজরুল ইসলাম খান

‘ফারাক্কা দিবস’ যেকোনো অধিকার আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে: মির্জা ফখরুল 

বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোল‌নের বিকল্প নেই: দুদু

রিজার্ভ আর অবৈধ সরকারের পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না: এবি পার্টি

ফারাক্কা দিবসের অঙ্গীকার- যৌথ নদী রক্ষায় সোচ্চার হোন: বাংলাদেশ ন্যাপ

অসুস্থ তাঁতীদল নেতা রেজাউল করিমকে দেখতে গেলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

জাপাকে বিক্রি করে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা হয়েছে: কাজী মামুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :