নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয় সেদিকে নজর বিদেশিদের

বাংলাদেশের এবারের ভোট নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোর। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগে থেকেই পরাশক্তিধর কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকদের ব্যাপক তৎপর দেখা গেছে।
ভোটের বাকি মাত্র এক দিন। এ অবস্থায় নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয় সেদিকে কড়া নজর রয়েছে কূটনীতিকদের। যদিও আগে থেকেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে এসেছে বিভিন্ন দেশ।
অন্যদিকে এ নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিধর কয়েকটি দেশের মধ্যে মতপার্থক্য ও বিভক্তিও দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনকে সমর্থন করছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন পদ্ধতিকে এবং নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেওয়ার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না তারা। বিএনপি ছাড়া নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র।
প্রকাশ্যে স্পষ্টভাবে মন্তব্য না জানালেও মার্কিন দূতাবাসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। সার্বিক বিষয় সম্পর্কে নিয়মিত নিজ দেশকে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচনে সহিংসতা বা সংঘাতের আশঙ্কা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে ইতোমধ্যেই ঢাকায় অবস্থান করা নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে দেশটি। অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও সহিংসতাহীন ভোটের বিষয়ে বারবার তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছি। তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন। আমরা সেদিকেই এগিয়েছি। বিভিন্ন সময় নির্বাচনি কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা নির্বাচনি কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। এখন অপেক্ষা শুধু সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হওয়ার।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের চোখে পড়ার মতো তৎপরতা শুরু হয় গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর নির্বাচন কমিশন, সরকারি দল, সংসদের বিরোধী দল, রাজপথের বিরোধীদলসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠকও হয়েছে পরাশক্তিধর মিশনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সব কূটনীতিকই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান রেখেছেন।
তবে নির্বাচনের এক মাস আগে পরাশক্তিধর কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কিছুটা বিভক্তি দেখা দেয়। যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে কূটনীতিকদের জন্য আয়োজিত ইসির ব্রিফিংয়ে। সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, যিনি ইতোমধ্যেই নির্বাচন বর্জনকারী সরকারবিরোধী বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। তবে ইসির ব্রিফিংয়ে মার্কিন দূতাবাস থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়।
ব্রিফিং শেষে অন্য কূটনীতিকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে গেলেও মুখোমুখি হন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। এদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন চীনা ও জার্মান রাষ্ট্রদূত। তারা দুজন নির্বাচন কমিশনের ভোটের যে আয়োজন তাকে সমর্থন করেছেন। আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই কমিশন সুষ্ঠু ভোট উপহার দেবে। আর ইইউ রাষ্ট্রদূত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট কি না সে প্রশ্নের উত্তরেও নীরব থাকেন।
আসন্ন নির্বাচন আয়োজনের প্রশংসা করে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘চীন থেকে আশা করছি নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনের পর বাংলাদেশ হবে আরও শক্তিশালী, সহনশীল ও ঐক্যবদ্ধ।
এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটা সফল ও নির্ঝঞ্ঝাট নির্বাচন হবে। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও মাইলফলক হবে।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে শুরু থেকে যোগাযোগ করার কথা তুলে ধরে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, ‘শুরু থেকে আমার অনুধাবন হচ্ছে তারা সাধ্যমত কাজ করার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, তারা বেশ গুরুত্ব সহকারে কঠোর পরিশ্রম করছেন।’
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবশ্যই তারা সঠিকভাবেই বলছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী নয়। তাদের কাজের বিষয়ে ব্যক্তিগভাবে আমার মনোভাব ভালো।’
এই বিভক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শুক্রবার রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো বিভক্তি চায় না। আমরা চাই সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিতর্কের উত্তর দিতে চায় বাংলাদেশ। সে কথা মাথায় রেখেই ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্যে আগামী ৭ জানুয়ারি রবিবার হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এতে ২৮টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১৯৭০ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন।
এ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে, নেতাকর্মীদের ওপর ‘দমনপীড়নের’ অভিযোগ জানিয়ে গত রবিবার জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দেয় বিএনপি। এর আগেও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এবারের নির্বাচন নিয়ে তাদের আপত্তি ও আন্দোলনের কথা জানিয়ে আসছিল দলটি।
আর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত (৪৮ ঘণ্টা) হরতাল ডেকেছে।
(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/টিআই/আরআর/কেএম)

মন্তব্য করুন