বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলা: ১১ আসামিকে ফের জেলে পাঠালো ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলায় বড় জয় পেলেন বাদী বিলকিস বানো। এ মামলায় অভিযুক্ত ১১ জন ধর্ষকের মুক্তি বাতিল এবং গুজরাট সরকারের আসামিদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে ভুল উল্লেখ করে সকল আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
বিলকিস বানোকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত ১১ জনকে ২০২২ সালে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাট সরকার। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিলকিস বানো।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিলকিস বানো মামলার শুনানি হয়। এ দিন গুজরাট সরকারের বিলকিস বানোর ১১ ধর্ষককে মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে শীর্ষ আদালত বলেন, গুজরাট সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনত এক্তিয়ার ছিল না। এটা সম্পূর্ণ অনিয়ম। গুজরাট সরকারের উচিত ছিল ২০০২ সালের আদালতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করা।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, নির্যাতিতার অধিকার সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের সম্মান করা উচিত। ২০০২ সালের মে মাসে গুজরাট সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা তথ্য লুকানো ও প্রতারণা। শীর্ষ আদালতের আদেশে আরও জানানো হয়েছে, গুজরাট সরকার ১৯৯২ মওকুফ নীতিতে আসামিদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল, তা ২০১৪ সালেই একটি আইনের মাধ্যমে বদলে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের ওই আইনে বলা হয়েছিল, গুরু অপরাধে অভিযুক্তদের সাজার মেয়াদ পূরণের আগে মুক্তি দেওয়া যায় না। গুজরাট সরকার অপরাধীদের মুক্তির নির্দেশে গ্রহণযোগ্যতার অভাব রয়েছে।
বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ড:
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়কালে গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস বানো। সেই সময় ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন বিলকিস। তার চোখের সামনেই ৩ বছরের কন্যাসহ পরিবারের ৭ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন বিলকিস। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই কোর্ট অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে মুম্বাই হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। ১৫ বছর কারাবাসের পর, ১১ আসামির মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে গুজরাট সরকারকে আসামিদের সাজা মকুবের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
পরবর্তীতে গুজরাট সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিই ১৯৯২ মওকুফ নীতিতে ১১ জনের মুক্তির সুপারিশ করে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ জনই সংস্কারী ব্রাহ্মণ। ১১ বছর সাজা ভোগ করেছে তারা এবং জেলেও তারা ভাল আচরণ করেছেন। ২০২২ সালে স্বাধীনতা দিবসের দিন গুজরাট সরকার অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়। হিরোর সম্মানে তাদের স্বাগত জানানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিলকিস বানো গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
১১ দিনের শুনানির পর গত অক্টোবর মাসে এই মামলার রায় সংরক্ষিত রাখে বিচারপতি বিভি নাগারত্ন ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের বেঞ্চ।
সূত্র: এনডিটিভি
(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/এমআর)

মন্তব্য করুন