‘বড় অফিসার হয়ে দেখা করতে আসবে’: আদালতে শিশুকে বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪০| আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৮
অ- অ+

২০২০ সালে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সি শিশু নাঈম হাসান নাহিদ। ওই বছর ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন শিশুটির বাবা। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। আজ ছিল চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিন।

সকালে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাতের হাইকোর্ট বেঞ্চে শিশুটি উপস্থিত হয়। এসময় স্বয়ং জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার শিশু নাঈমকে কাছে ডাকে নেন। বলেন, ‘তুমি আর দুষ্টুমি করবে না। ভালোভাবে পড়াশোনা করবে।’ এসময় শিশু নাঈম মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক জবাব দেয়। বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, ‘এই চকলেটগুলো নাও। চকলেট শুধু তোমার জন্য। ভালোভাবে পড়ালেখা করে বড় অফিসার হবে। আমরা কিন্তু তোমার পড়াশোনার খোঁজ নেব। যখন আমরা বুড়ো হব, বড় অফিসার হয়ে দেখা করতে আসবে। আমরা অপেক্ষায় থাকব। ভালো থেকো।’

এর আগে হাইকোর্ট বেঞ্চ হাত হারানো শিশু নাইমের নামে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি শিশুটিকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলেন। ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, এ রিট মামলা চলমান থাকবে।

রায়ের পর আইনি লড়াইয়ে বিজয়ের আনন্দে শিশুটির বাবা আইনজীবীদের জড়িয়ে ধরে কান্না করেন। শিশু নাঈমও হাউমাউ করে কান্না করেন। এসময় এক আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

রায় ঘোষণার আগে হাইকোর্ট বলেন, আমরা শিশুটির পড়াশোনা ও কল্যাণের কথা চিন্তা করে রায় দিচ্ছি। রায়ে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে তিন বছর আগে হাত হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সি শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করতে হবে। ১০ বছর পর নাঈম হাসান নাহিদ ডিপোজিটের টাকা উত্তোলন করতে পারবে। আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখায় ফিক্সড ডিপোজিট করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে শিশুটি এইচএসসি পাস না করা পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ হিসেবে তাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। তারা বিনা পয়সায় শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আইনজীবী আবদুল বারেক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর শিশু নাঈম হাসানকে ক্ষতিপূরণ দিতে রুলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নাঈম হাসানের বাবা আনোয়ার হোসেনের জুতার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ১০ বছরের নাঈম তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগের ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর শুনানি হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এসএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা