বিএসএমএমইউতে ব্লাড ক্যানসার রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সম্পন্ন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ ) সফলভাবে এক ব্লাড ক্যানসার রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা ৬৩ বছরের এনামুল হক মাল্টিপোল মায়েলোমা বা জটিল রক্তের ক্যানসার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ্ রোগীর শরীরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করেন।
এ বিষয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ-ব্লকে ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন এন্ড স্টেম সেল থেরাপি’সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। যিনি বোনম্যারো ট্যান্সপ্লান্টের পুরো প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাসপাতালটিতে এফ-ব্লকে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থায়ীভাবে গত ১লা জানুয়ারি ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন এন্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টার’ স্থাপন করা হয়। এই সেন্টারে প্রথমবারের মত সফল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা হয়। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা ৬৩ বছরের এনামুল হক গত চার মাস আগে নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগ নিশ্চিত করেন এনামুল হকের শরীর মাল্টিপল মায়েলোমা বা জটিল রক্তের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। এরপর হেমাটোলোজি বিভাগে তার চিকিৎসা শুরু করা হয় এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তাকে অটোলোগ্যাস বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন দেবার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রোগীর শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। ওইদিনই রোগীর কন্ডিশনিং থেরাপি দেওয়া হয়। গত ১৮ জানুয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ্ রোগীর শরীরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করেন। ৩০ জানুয়ারি রোগীর নিউটোফিল রিকভারি হয়। ট্রান্সপ্লান্টেশনের ১৮ দিন পর রোগীর শরীরের কোনো ধরনের জটিলতা দেখা যায়নি। যা চিকিৎসকরা স্বাভাবিক ও ইতিবাচক এবং বোনম্যারো সফলভাবে প্রয়োগ হয়েছে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি’সেন্টারে প্রথম রোগী হিসেবে মাত্র ৩ লক্ষ ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ভেদে এ ট্রান্সপ্লান্টেশনের খরচ ৬ লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। দেশের এই ধরনের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের খরচ হাসপাতাল ভেদে ২০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের রোগীদের যাতে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে না হ সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সেন্টারে মাসে ৩ থেকে ৫টা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব । আপাতত যে অবকাঠামো রয়েছে তাতে প্রতি মাসে একটি করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ এই ট্রান্সপ্লান্টেশনের কারিগড়ি বিষয় উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, হেমাটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজসহ বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার, রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/এলএম/এসএম)

মন্তব্য করুন