ভালোবাসার গায়ে ফাগুনের রঙ

উত্তরের হিমেল হাওয়া শেষে প্রকৃতিতে বইছে দখিনা বাতাস। জানান দিচ্ছে আজ বুধবার ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী দিন, পহেলা ফাল্গুন। এই ফাল্গুনে ফুলের বনে দোলা লাগে, দোলা লাগে মনেও। ব্যাকুল হৃদয় বসন্ত দিনেই হারিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে বসন্তের প্রথম দিনেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভালোবাসা দিবস। একই সুঁতোয় গাঁথা বসন্ত আর ভালোবাসায় আজ প্রস্ফুটিত হবে ভালোবাসার প্রসূন।
বাঙালীর প্রাণে বসন্তের আবেদন আবহমান কাল থেকে। ষড়ঋতুর সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত। শীতের বিদায় বেলায় এবং গ্রীষ্মের আগে এর আগমন। বহুবছর ধরে দিবসটি উদযাপিত হয় বহুভাবে। মোঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ সালে প্রবর্তন করেছিলেন বসন্ত উৎসব। প্রাচীন আমল থেকেই পালিত হওয়া বসন্ত উৎসব বাংলাদেশে উদযাপনের রীতি চালু হয় বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি দফায় দফায় বদলে যায়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী সাধারণত ফাল্গুন মাস ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতো। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে সরকারিভাবে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ থেকে শুরু হয় পহেলা ফাল্গুন। বাঙালির নিজস্ব এই সার্বজনীন প্রাণের উৎসবটি এখন ব্যাপক সমাদৃত। এছাড়াও বসন্তের দিনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালীর গৌরবময় ঐতিহ্য। ১৯৫২ সালের আট ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনে ভাষার জন্য বুকের রাজপথও রঞ্জিত হয়েছিল।
বসন্ত বরণ বাঙালির অন্যতম সাংস্কৃতিক উৎসব হওয়ায় সব বয়সীরা মেতে উঠে আনন্দে। বাহারি ফুলের ডালা সাজিয়ে বসন্তের আগমনে ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ’ আয়োজন করে আসছে বসন্ত উৎসব। দিনভর বর্ণাঢ্য র্যালি, সূচনা সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, গানসহ নানা কর্মসূচি থাকে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমণ্ডি লেক, বলধা গার্ডেনসহ নানা জায়গায় আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোতে দিনভর তরুণ—তরুণীসহ সব বয়সীদের অংশগ্রহণে নব উদ্যমে জেগে উঠে প্রতিটি প্রাণ।
এদিকে পশ্চিমা রীতির ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস পালিত হয় ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশেও ঘটা করে উদযাপিত হয়ে আসছে দিবসটি। গত কয়েকবছর ধরে ফাল্গুন দিনে ভালোবাসার রঙে মেতে ওঠে তরুণ প্রজন্ম। বাসন্তী শাড়ি—চুড়ি আর লাল পাঞ্জাবী পরে তরুণ তরুণীরা ঘুরে বেড়ায়। মনের মানুষের কাছে প্রণয় নিবেদনে এমন দিনের জন্য ব্যকুল থাকে তারা। একসঙ্গে বেড়ানো, উপহার দেওয়া, খেতে যাওয়ার মতো আন্দময় মুহূর্তগুলো সারাজীবনের সঞ্চয় করে রাখতে চায় যুগলরা। চিরপুরাতন আবেগ নতুন করে বহিঃপ্রকাশ করে এই দিনে। ভালোবাসতে চায়। ভালোবাসা পেতে চায়। তবে এই দিনটি শুধুই প্রিয়জনের জন্যই নয়।পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গেও উদযাপিত হয় দিনটি। বইমেলা প্রাঙ্গণও সব বয়সীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।
গ্রামীন জনপদেও কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুনরাঙা ফাগুন আর বাতাসে শিমুলে মাদকতায় শুরু হয় নানা আয়োজন। শাখায় শাখায় নতুন মুকুলের ঘ্রাণ আর পলাশ—শিমুলের মাদকতায় মাতাল হয় তরুণ—তরুণীরা। খোঁপায় ফুল গুঁজে আর হাতভর্তি কাঁচের চুড়িতে প্রিয়জনের অপেক্ষায় থাকবে ষোড়শী। বরের পাতে রঙ্গিন পিঠে দেবার অপেক্ষায় থাকবে বাঙালির বধু। কোকিলের ডাকে আর নতুন পত্রপল্লবে প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের সববয়সীরা ভালোবাসার রঙে মেতে ওঠুক বসন্ত বন্দনায়।
(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/কেএ/এসআইএস)

মন্তব্য করুন