অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৪

চিন্তাবিহীন কার্য নাকি ডেকে আনে বিপদ। আবার অতিরিক্ত চিন্তায় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন। বেশি চিন্তা মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা, মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা।

বর্তমানে সমাজে দুশ্চিন্তা যেন অনেক বেড়ে গেছে। আমরা সবাই কমবেশি কোন না কোন বিষয়ে চিন্তায় থাকি, বা মানসিক চাপে ভুগি। এগুলো মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো ভালো। কিন্তু কেউ যখন সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন, যেটা রীতিমত ভীতিকর হয়ে উঠে এবং যা থেকে আর মুক্তি পাওয়া যায় না, তখন সেটাই আসলে মানসিক উৎকন্ঠা বা দুশ্চিন্তা। এই সমস্যা এতটাই তীব্র হয়ে উঠতে পারে যে এটি আপনার পুরো জীবন বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, আপনার নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন তৈরি করতে পারে।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়া, শরীর কাঁপা, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা, ডায়ারিয়া এবং অসুস্থ বোধ করা লক্ষণগুলো বেশি দেখা দেয়।

সারাদিনে যা খাই তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই খেতে হবে বুঝেশুনে। দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য মুঠো মুঠো ওষুধ বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বদলে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর ও সহায়ক খাবার। তবে দুশ্চিন্তার মাত্রা অতিরিক্ত হলে নিতে হবে সঠিক চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

প্রতিদিনের খাবার কিছু পরিবর্তন এনে এই মানসিক চাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে তা কোনো দুর্লভ খাবার নয়, বরং সবার ঘরেই থাকে এমনকিছু খাবার যোগ করতে হবে খাবারের তালিকায়। আর তাতেই মিলবে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি।

ডার্ক চকোলেট

ডার্ক চকোলেটে যে কোকো থাকে, তা আমাদের মন ভালো করে দেয়। পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড এই দুই যৌগ আমাদের মস্তিষ্কের কোশ সতেজ রাখতে সাহায্য করে, স্ট্রেস কমায়। তবে এক্ষেত্রে যে চকোলেটে ৭০ শতাংশ অথবা তার বেশি কোকো থাকে, সেটাই খান।

কুমড়ার বীজ

কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া মানসিক চাপ, উদ্বেগ কমাতেও কুমড়োর বীজ খুব উপকারী।

ডিম

বহু ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে এতে। তার সঙ্গে আছে কোলাইন বলে একটি উপাদান। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। মানসিক চাপ কমায়।

চিকেন

চিকেন ভালোবাসেন না, এরকম মানুষ বোধহয় খুবই কম। চিকেনে রয়েছে এমন উপাদান যা মনকে খুব সহজেই ভালো করে দিতে পারে। এছাড়াও চিকেনে থাকে প্রোটিন, ফ্যাট। আর তাই যদি চিকেনের কোনও কিছু প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে শরীরও থাকবে সুস্থ, মনও ভালো থাকবে। প্রতিদিন চিকেন খেলে ১০০ গ্রাম এর বেশি কোনওভাবেই খাবেন না।

কমলালেবু

কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। সেই সঙ্গে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও থাকে ক্যারটিনয়েড ও ফ্ল্যাভোনয়েড। যা শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে। অর্থৎ মন খুব ভালো করতে পারে। আর তাই কমলালেবুর রস করে খেতে পারলে খুব ভালো। রস করলে অবশ্যই তা চিনি ও পানি ছাড়া খাবেন।

টমেটো

টমেটোর মধ্যে থাকা লাইকোপেন মন ভালো করে। এছাড়াও আছে ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন যা মন ভালো করার অনুঘটক। তাই টমেটোর সস দিয়ে যেকোনও খাবার, কিংবা শেষ পাতে টমেটোর চাটনি এত মন ভালো করে দেয়।

ফল ও শাকসবজি

স্বাস্থ্যকর তো অবশ্যই। পাশাপাশি ফল ও সবজি মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ফলের তৈরি পাই, স্মুদি, আইসক্রিম ইত্যাদি মানসিক অবস্থা উন্নতির জন্য দারুণ উপকারী। পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজিও মানসিক অবস্থা ভালো করতে সাহায্য করে। ফল ও সবজিতে রয়েছে ফাইটোকেমিকল, ভিটামিন সি এবং প্রোটিন, যা মন ভালো করতে সাহায্য করে।

মধু

উদ্বেগ, মনখারাপ নিমেষের মধ্যে সারিয়ে দেয় মধু। মন ভালো রাখতে মধুর থেকে ভালো আর কিছু হয় না। সেই সঙ্গে হজমও হয়। এছাড়াও মধুর অনেক গুণ রয়েছে। তাই প্যানকেকে মধু ছড়িয়ে কিংবা গ্রিন টি-তে সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়।

বাদাম

বাদাম খেতেও সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যকরও বটে। ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলসে ঠাসা বাদাম অবসাদ কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলু

মানসিক চাপের বড় কারণ কোর্টিসোল হরমোনের ক্ষরণ। মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু এই হরমোনের ক্ষরণের পরিমাণ কমায়। মন ভাল থাকে।

ব্রকোলি

এটিতে সালফোরাফেন নামক উপাদান রয়েছে। সেটি অবসাদের পরিমাণ কমায়। এবং মন শান্ত করে।

কাবলি ছোলা

শুধু খেতেই ভাল নয়, এই ছোলা মস্তিষ্কের জন্যও খুবই উপকারি। এর এল-ট্রিপটোফান নামক উপাদান মন ভাল করে দেয়।

দই

বিষন্নতা, হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি সমস্যায় ভুগে থাকলে আপনার প্রতিদিনের খাবারে একবাটি দই যোগ করুন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফলাফল বলছে, যদি টানা চার সপ্তাহ দিনে দুইবার দই খাওয়া যায় তবে মস্তিষ্ক অনেক বেশি কাজ করে।

সামুদ্রিক মাছ

স্যামন বা ওই জাতীয় সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ এবং ভিটামিন ডি থাকে। এই দুইটিও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

রসুন

বহু গবেষণা থেকেই প্রমাণিত রসুনের বেশ কিছু উপাদান উদ্বেগ এবং অবসাদ থেকে মনকে দূরে রাখে।

ক্যামোমাইল চা

এই চায়ের বেশ কিছু উপাদান ঘুমোতে সাহায্য করে। রাতে এই চা খেলে ঘুম ভাল হয়। ফলে মনও ভাল থাকে।

ব্লুবেরি

এ দেশেও ব্লুবেরি সহজেই পাওয়া যায়। দিনে কয়েকটি মাত্র ব্লুবেরিই মনকে চনমনে করে দিতে পারে। এর ফ্লেভানয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেজাজ ভাল করে দেয় অল্প সময়েই।

(ঢাকাটাইমস/২২ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :