ভুল চিকিৎসায় স্থপতির মৃত্যুর অভিযোগ, বিচার দাবি পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:২৫ | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৭

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০০৩ ব্যাচের সদস্য ও রুফলাইনার্স স্টুডিও অব আর্কিটেকচারের অন্যতম প্রধান স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যু ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ও অবহেলায় হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্য ও স্থপতিরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়। সেখানে রাজীব আহমেদের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবালের (তেষা) পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থপতি নবী নেওয়াজ খান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত দেড় বছর যাবত রাজীব শমরিতা হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নতুন ওষুধ সেবন শুরু করার নয় দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে রাজীব ডা. কবীর চৌধুরীর নির্দেশে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়। কবীর চৌধুরী শমরিতা হাসপাতালের একজন ডিরেক্টর।

শমরিতায় রাজীবের অবস্থা উত্তরোত্তর খুব খারাপের দিকে যাওয়ায় এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ায় একদিন পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শমরিতায় রাজীবের শিরাপথে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্কয়ারে ৮টি অ্যান্টিবায়োটিকসহ মোট ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। ফলে বহুবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং চারটি অ্যান্টিবায়োটিক কিডনি সংশ্লিষ্ট বিষক্রিয়াও বোধহয় রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে।

অভিযোগ করে বলা হয়, উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলাকালীন সময় অব্যবস্থাপনা ছিল এবং কালক্ষেপণ করা হয়েছে। বিশেষত শমরিতায় লিভার এনজাইমগুলোর মাত্রা অনেক বেশি থাকার পরও তারা লিভার ফেইলরের ডায়াগনসিসকে আড়াল করে অন্য ডায়াগনসিস উল্লেখ করেছে।

স্কয়ার হাসপাতালে শুক্রবার রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরেও কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিদর্শনে আসেননি বা কোনো সুনির্দিষ্ট ডায়াগনসিস না করে কালক্ষেপণ করা হয়। ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বারবার একই কথা বলেছেন। ডাক্তাররা বলেছেন, ব্যথা ও লিভার এনজাইমের মান বাড়তে বাড়তে একসময় কমা শুরু করবে। ধৈর্য ধরে বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবে।

কিন্তু রাজীব তখন লিভার ফেইলর থেকে একে একে অন্য অর্গান ফেইলরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আট দিন ভয়ংকর যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে রাজীব তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। অথচ এই সম্ভাব্য পরিণতির কোনো আভাসই চিকিৎসকরা রাজীবকে আইসিইউতে নেওয়ার আগে বা কেবিনে থাকা অবস্থায় তার পরিবারকে দেননি।

অন্যদিকে আইসিইউতে নেওয়ার পর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা নট ফিট টু ফ্লাই ঘোষণা করে। এই কালক্ষেপণ, সঠিক ও সময়োচিত ব্রিফিংয়ের অভাব রাজীবকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসকরা রাজীবের অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে আমাদের সম্যকভাবে অবহিত করলে আমরা তাকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারতাম। কারণ আমাদের দেশে লিভার ডায়ালাইসিসের কোনো সুবিধা নেই।

রাজীব আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার দুই সন্তান, মা, তিন বোন ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীর পক্ষ থেকে তার স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং আর কেউ যেন এমন ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার শিকার না হয়, এই দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) অভিযোগ দাখিল করেন। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এই অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

স্থপতি রাজীব আহমেদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। রাজীব আহমেদ দুই কন্যাসন্তানের জনক। তাদের একজনের বয়স ৮ বছর এবং অপরজনের এক বছর চার মাস।

(ঢাকাটাইমস/০৭মার্চ/এমআই/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :