ঢাকার লেকগুলো করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে রাজউকের প্রতি আহ্বান মেয়র আতিকের

রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের (রাজউক) অধীনে থাকা লেকগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও গুলশান সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে গুলশান লেক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
মেয়র আতিক বলেন, লেকগুলো পরিস্কার করে দেয়া গুলশান এলাকার মানুষের জন্য ঈদ উপহার। গুলশানের লেক দীর্ঘদিন ধরে শুষ্ক অবস্থায় ছিল, বিভিন্ন স্থানের মলমূত্র পড়ত এই লেকে, ছিল দুর্গন্ধ। এই লেককে পরিস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে লেকটি এখন রাজউকের অধীনে হলেও সিটি করপোরেশন নিজ দায়িত্ব নিয়েই কাজ করছে।
তিনি বলেন, গুলশান লেক, বারিধারা লেক এখনো রাজউকের অধীনে আছে। তাদের আমি চিঠি দিয়েছি এগুলোকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে দিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু এই লেক এখনো রাজউকের অধীনে রয়ে গেছে। আমরা তাদের বলেছি এই লেক পরিষ্কার করার জন্য। কিন্তু তারা করেনি, সিটি করপোরেশনকেও দেয়নি। কিন্তু কে এলো, না এলো আমরা সেটা দেখব না।
আতিকুল ইসলাম বলেন, গুলশান মসজিদের সামনে গুলশান লেকে জাহান্নাম থেকেও খারাপ অবস্থা হয়ে আছে। এই এলাকার মলমূত্র সব এখানে ফেলা হয়। এটি মেনে নেয়া যায় না। এই লেকগুলোতে মাছের চাষ হয় না, মশার চাষ হচ্ছে। আমি চাই এই লেকগুলোতে শিশুরা খেলবে। ওয়াটার টেক্সি চলবে। আরও আধুনিক যন্ত্র থাকবে যা দিয়ে তারা খেলবে। কিন্তু পানি হয়ে আছে শতভাগ দূষিত। পানিতে অ্যামোনিয়ার গন্ধ। এখানকার কোনো মানুষ এই লেক থেকে উপকৃত হচ্ছে না। এই এলাকায় বলা হয় অতিরিক্ত মশা, তা এই লেকগুলো থেকে হয়। এই লেককে পরিষ্কার করে দেয়া গুলশান এলাকার মানুষের জন্য ঈদ উপহার।
মেয়র বলেন, গুলশান এলাকায় এখানে অনেক গুলশান সোসাইটি মসজিদ আছে। এখানকার মুসল্লিরা প্রায়ই অভিযোগ জানায় পাশের লেক থেকে দুর্গন্ধ আসে। এসব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী এম এ আরাফাতকে এই এলাকা পরিচ্ছন্নতা ও লেক পুনঃজীবিত করার এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বললে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন।
মেয়র বলেন, সরকারের একার পক্ষে একটা সোসাইটিকে সুন্দর করা সম্ভব না যতক্ষণ না এখানকার মানুষই এগিয়ে আসে। আজকে এখানকার বিভিন্ন স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও শিশুরা এই কার্যক্রমে উপস্থিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ফাউন্ডেশন ও এখানে উপস্থিত হয়েছে। আমরা দেখছি বিভিন্ন জায়গা থেকে পয়ঃবর্জ্য এই লেকে এসে পড়ছে। আজকে থেকে এই এলাকায় অভিযান চলবে। যারা বর্জ্য সরাসরি ফেলবে তাদের ড্রেনে আমি কলাগাছ থেরাপি দেব। যাতে করে এই বর্জ্য আবার তাদের দিকে ব্যাক যায়। ড্রেনের সঙ্গে কেনো কানেক্ট দিয়েছে মানুষ। এখানকার একেকটি ফ্ল্যাট ২৫ কোটি, ৫০ কোটি। সেখানে ড্রেনের সাথে একটি চোরাই পাইপ সংযুক্ত করা হচ্ছে। এই ড্রেন দিয়ে শুধু বৃষ্টির পানি যাওয়ার কথা।
‘একটা ছোট ইপিপি প্ল্যান্ট করতে মাত্র ৩ লাখ টাকা লাগে। এসব প্ল্যান্ট করতে রাস্তার নিচে যতটুকু জায়গা লাগে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা করে দেবে। আমরা চাই শুধু সরকার না এলাকাবাসীও এগিয়ে আসবে।’
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, নির্বাচনের আগে এবং পরে এই এলাকার মানুষের অনেকগুলো দাবির মধ্যে প্রধান দাবি ছিলো লেকগুলো পরিষ্কার করতে হবে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই লেক পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে আমি এই এলাকা থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচনের আগে এবং পরে এই এলাকার মানুষের অনেকগুলো দাবির মধ্যে একটি দাবি বারবার আমার কাছে তুলে ধরা হয়েছিল। সেটি হলো লেকগুলো পরিষ্কার করতে হবে। শুধু গুলশানের নয়, কালাচাঁদপুর যে লেক আছে, বারিধারার পেছন দিকে যে লেক আছে এছাড়াও অনেকগুলো লেক আছে যেগুলো পরিষ্কার করা দরকার।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যতগুলো লেক আছে সবগুলো পরিষ্কার করতে হবে। আমি মনে করি পরিষ্কার করতে হবে এই চিন্তা করতে করতে নয় মাস পার হয়েছে। আমরা আর দেরি করতে চাই না।
‘আমার একটা প্রত্যাশা থাকবে শুধু লেকগুলো পরিষ্কার হবে তাই নয়। আগামী দিনেও যাতে লেকগুলো পরিষ্কার থাকে এবং মেইনটেন্স (পরিচর্যা) ঠিক মতো থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা সবাই মিলে করব।
এসময় পরিষ্কার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত সহ বিভিন্ন দূতাবাস থেকে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/এমআই)

মন্তব্য করুন