ফরিদপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৩ | প্রকাশিত : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৫:১৯

ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতব্বর অন্তর (১৪) হত্যা মামলায় তিনজনের ফাঁসি ও আরও তিনজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অন্যান্য ধারায় যাবজ্জীবন এবং বাকি আসামিদের একটি ধারায় ১৪ বছরের এবং অপর একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বমোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার পরে আদালত থেকে হাজতখানায় নেয়ার সময় লিফটের মধ্যে আসামিরা পরস্পরে কিলাকিলিতে লিপ্ত হন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নগরকান্দার চরমানিকদি গ্রামের হাবিব বেপারির ছেলে মাহাবুব আলম, পিপরুল গ্রামের আলতাফ মাতব্বরের ছেলে কামাল মাতব্বর ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের মোবারক মাতব্বরের ছেলে (৩) খোকন মাতব্বর। তাদের প্রত্যেককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

এছাড়া এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পাগলপাড়া গ্রামের দুলাল শেখের ছেলে আশরাফ শেখ ও আজিজুল শেখ এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে সুজন মাতব্বর। তাদের প্রত্যেককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছর এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়া দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুন রাতে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পরে অপহরণ করা হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসেন মাতব্বরের ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আলাউদ্দিন মাতব্বর অন্তরকে। পরের দিন এ ঘটনায় অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করার পরে ওই রাতেই জান্নাতির মোবাইলে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে (একটি ইরিব্লকের মেশিনঘরে টাকা রেখে) অপহরণকারীদের নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। ১৫ জুন অন্তরের মা ১৬ জনের নামোল্লেখ করে নগরকান্দা থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলা নং-১৪। এরপর ২২ জুন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে অন্তরের পরিবারের সংবাদ সম্মেলন করে। পরের দিন পত্র-পত্রিকায় এ খবর ছবিসহ প্রকাশের পর ২৪ জুন পুলিশ মুক্তিপণ দাবিকৃত মোবাইলের মালিক মাহবুব আলম ও তার ভাই জুবায়ের বেপারিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৬ জুন রাতে পুলিশ চকের মধ্যে উল্টো করে পুঁতে রাখা আলাউদ্দিন মাতব্বর অন্তরের লাশ উদ্ধার করে।

২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি জুবায়েরকে দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেন।

এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তিনি বলেন, সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দেয়ায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল জানান, দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় ও অ্যাডভোকেট বিমল তুলশিয়ান বলেন, এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/প্রতিনিধি/ এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :