প্রস্তুত পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার

অতি সন্নিকটে পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাকি আছে মাত্র দুইদিন। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন লাখো পর্যটক। এমনটাই আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটক বরণে প্রস্তুত হয়েছে। দিচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ছাড়।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে চলতি পর্যটন মৌসুমের বড় অংশ কেটেছে পর্যটক খরায়। জাতীয় নির্বাচন, মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ মৌসুমে পর্যটন খাত বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। তবে পর্যটক শূন্যতার এই মন্দা কাটতে শুরু করে জানুয়ারির শেষের দিক থেকে। এ সময় থেকে কক্সবাজারমুখী হতে শুরু করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
জানা গেছে, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজের প্রায় ৬০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সাড়া দিয়েছে।
কলাতলির স্যান্ডি রেস্টুরেন্ট অ্যাণ্ড রিসোর্টের স্বত্ত্বাধিকারী আবদুর রহমান বলেন, ঈদের পরের দিন থেকে সরগরম হবে পর্যটন নগরী। ইতোমধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে নতুনভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। এবারের ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় বুকিং বেড়েছে। আমরা আশা করছি এবারে কক্সবাজারে কয়েকলাখ পর্যটকের সমাগম হবে।
তবে পরিবহণ সেক্টরে রমজানে কোনো ব্যবসা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন শ্যামলী এনআর এর ইনচার্জ মোহাম্মদ রিপন। তিনি বলেন, পুরো রমজানে বাসে পর্যটক ও স্থানীয়রা যাতায়াত করেনি যা করছে ট্রেনে। যারা ভ্রমণ করছেন সবাই ট্রেনে আসা যাওয়া করছেন। আর প্রতিবছর অনেক এনজিওর কর্মকর্তা কর্মচারীরা কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদ করতে যেত বাসে করে। এ বছর তাও কমে গেছে।
কক্সবাজার সৈকতে তারকা মানের হোটেল কক্স টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, আমাদের হোটেলে কক্ষ আছে ১৭০টি। হোটেলটির পর্যটক নেই বললেই চলে। যারা আসছেন, তাদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে হোটেলের সংস্কার কাজও চলছে।
পাশাপাশি ঈদ ও বাংলা নববর্ষে পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনার কথাও তিনি জানান।
একই অবস্থা শহরের অভিজাত হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন রিসোর্ট, সীগাল, লং বিচ, সি প্যালেস, হোটেল কল্লোল, রয়েল রিসোর্টসহ মাঝারি হোটেল ও রিসোর্টগুলোরও।
এনিয়ে কক্সবাজার হোটেল, রিসোর্ট গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এখন হোটেল-রেঁস্তোরার সংস্কার কাজ চলছে। এরমধ্যে কর্মচারীদের বড় অংশকে ঈদের অগ্রিম বেতন-বোনাস দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, রোজা শেষে ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের টানা আট দিনের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে। তখন পর্যটক নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও চাঙাভাব দেখা দেবে। এ জন্য পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পর্যটক টানতে রোজার মাসে হোটেল-রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের কক্ষ ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঈদ পর্যন্ত এ ছাড় চলবে।
এদিকে, পর্যটক হয়রানি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। তার পরও হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা চালকের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, পর্যটকদের জন্য স্পেশাল বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল কমিউটার ট্রেন চালানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের পরদিন থেকে টানা ১০ দিন পর্যন্ত চাপ থাকবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, ঈদের এক দিন আগ থেকে কক্সবাজার রুটে চাপ রয়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে কক্সবাজার দৈনিক ২০টি ফ্লাইট আসবে ২০টি যাবে। এবারের ঈদে ছুটিতে পর্যটকদের টিকিটের চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে আমরা ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।
এ নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া টানা ছুটি, বিশেষ দিনে বাড়তি টহল ও নজরদারি বাড়ানো হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকদের সেবা ও ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। পর্যটকরা যাতে কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য পর্যটন এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে।
উল্লেখ্য, গেল ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মায়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ছেদ পড়ে। অধিকাংশ পর্যটক পছন্দের সেন্টমার্টিনে যেতে না পেরে অতৃপ্ত মনে কক্সবাজার ছাড়েন। নাফনদীর সীমান্তে নিরাপত্তা বিবেচনায় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এবার পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ পাননি। তারপরও গত দেড় মাসে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রে ভরপুর পর্যটক ছিল। হইহুল্লোড়-উচ্ছ্বাসের সেই সমুদ্র সৈকতে রমজান মাসজুড়ে চলছে সুনসান নীরবতা।
(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন