পাথরঘাটায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট

ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা (বরগুনা)
 | প্রকাশিত : ০২ মে ২০২৪, ১৭:১৯

পানির সংকট বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সংকট। ক্রমান্বয়ে এই সংকট আরো তীব্র হচ্ছে এবং সারাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ বরগুনার পাথরঘাটায় চলমান তীব্র দাবদাহে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার অস্বাভাবিক গরমের পাশাপাশি নাই স্বস্তির বৃষ্টি। উপকূলীয় জনপদে চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রতিদিন পানির চাহিদা বাড়লেও বাড়ছে না সুপেয় পানির পরিমাণ। পানির উৎস পুকুর, দীঘি, জলাশয়, নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে হ্রাস পাচ্ছে নিরাপদ পানির চাহিদা। নদীমাতৃক এলাকার চারদিকে পানি থই থই করছে, কিন্তু মিলছে না নিরাপদ খাবার পানি। তাই সুপেয় পানির অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের জনজীবন।

সমুদ্র উপকূলে চারদিকে পানি নিয়ে বসবাস বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলাবাসীর। অথচ এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করতে হয় উপজেলার পেীরসভাসহ আটটি ইউনিয়নের মধ্যে কাঠালতলী, কালমেঘা, পাথরঘাটা সদর, চরদুয়ানী, নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মানুষদের। কারণ নদী ও সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হওয়ায় বৃষ্টি আর পুকুরের পানি তাদের একমাত্র ভরসা। কাকচিড়া ও রায়হানপুর ইউনিয়নের মানুষ পান করছে নলকূপের মিষ্টি পানি, এর মধ্যে রায়হানপুর ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় নলকূপের পাইপে উঠে আসে লবণাক্ত পানি, খাবার পানি ঠিক থাকলেও গোসলসহ নানা কাজে ব্যবহারে তাদেরও রয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

এদিকে প্রখর রোদে অধিকাংশ পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানি পাওয়া আরো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে এক কলস পানি সংগ্রহে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটতে হয় গ্রামবাসীকে। একাধিক উন্নয়ন সংস্থা পানির ফিলটার বসালেও চাহিদার তুলনায় পুকুর কমে যাওয়ায় সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, চারদিকে লবণ পানি থাকায় খাবার ও গোসলে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিতে এসেও সিরিয়াল না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।

পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান, বিগত বছরগুলোতেও সংকটময় পরিস্থিতিতে গাড়ির মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খাবার পানি সরবরাহ করেছি, এ বছরও এমন অবস্থায় জরুরি সংকট সমাধানে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পানি সরবরাহের আশ্বাস দেন তিনি।

জানতে চাইলেপাথরঘাটা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, গরম শুরু হওয়ায় পাথরঘাটায় পানির সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে একটি প্রকল্প চালু আছে, এ কাজটি সম্পূর্ণ হলে অনেকটাই সংকট সমাধান হবে বলে দাবি করেন তিনি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাথরঘাটা উপজেলায় ৮৬টি টিউবওয়েল, ৬৮টি সোলার পিএসএফ সহ ৪৫২০টি পানির ট্যাংকি ২০২৫ সালের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও ৪৮টি পুকুর খনন করা হয়েছে, তবুও পানির তীব্র সংকটে উপজেলা জুড়ে।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূলের মানুষের পানির দুঃখ বারো মাস। উপকূলের পানির কান্না কেউ শুনতে পায় না। প্রকৃতিগতভাবেই এখানে পানি আছে ঠিকই কিন্তু সুপেয় পানি নেই, তাই বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংকি দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিশেষ করে যেহেতু বিষখালী এবং বলেশ্বর নদ রয়েছে তাই পুকুর, খাল ও নদী থেকে ভূ-উপরস্থ পানি পরিশোধনাগারের মাধ্যমে রিফাইন করে সরবরাহ করলে এ সংকট স্থায়ীভাবে দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া উচিত।

(ঢাকা টাইমস/০২মে/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :