এসবির অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৯

বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অফিসার পরিচয় দিয়ে পাসপোর্টের জন্য বিভিন্ন আবেদনকারীর কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কাজী মো. বেলাল হোসেন (৩৫), মো. জসিম উদ্দিন (৩৩), মো. আল-আমিন গাজী (২৭), হাসান আহম্মেদ (২৯), মো. সোহাগ আলম, মো. হোসাইন মোল্লা, নুরুজ্জামান মিয়া, মামুনুর রহমান ও মো. রাসেল ইসলাম।
ডিবি জানায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্যরা ও কর্মকর্তারা। চক্রটি পুলিশ পরিচয়ে ট্রুকলারে নম্বর সেইভ করে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তথ্য নিয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা প্রতারণা করে আসছিলেন।
সোমবার রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) হারুন আর রশীদ।
তিনি বলেন, “এই প্রতারক চক্র পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী, পিয়ন ও আনসার সদস্যদের যোগসাজশে পাসপোর্ট অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ডেলিভারি এবং আবেদন ফরমে দেওয়া মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে এ নম্বরসমূহে ফোন করে প্রথমে আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (এনআইডি, বিদ্যুৎ বিলের কপি) হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলে এবং পরে প্রতারণা করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে।” ডিবি প্রধান বলেন, “এবিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন শাখা সবুজবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।”
হারুন আর রশীদ বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পাসপোর্ট অফিসে অসাধু কর্মচারী, পিয়ন, আনসার সদস্য, কর্মকর্তার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়। পুলিশের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ভেরিফিকেশনের কথা বলে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে। পুলিশের ছবি ও নাম ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে প্রতারণার কাজে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে ভুয়া নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিম সংগ্রহ করে নিজেরা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন। অন্যের নামে বিকাশ/নগদ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টযুক্ত সিম সংগ্রহ করে প্রতারণার অর্থ লেনদেন করে।”
গ্রেপ্তারকৃত আসামি বেলাল হোসেনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. জসিম উদ্দিনের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।
যেভাবে অপরাধ করে চক্রটি গ্রেপ্তারকৃত বেলাল, জসিম, হাসান, আল-আমিন ভেরিফিকেশনের নামে মিথ্যা পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা উল্লেখিত ঘটনার মূল চক্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই চক্রের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী, পিয়ন, আনসারসহ নানান লোকজন জড়িত। এই চক্রটি পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পুলিশ পরিচয়ে ভেরিফিকেশনের নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে। তারা ভুয়া নামে সিম রেজিস্ট্রেশনকালে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কৌশলে সংগ্রহকারী অপর গ্রুপের কাছ থেকে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত এবং বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্টকৃত সিম সংগ্রহ করে। এ নম্বরগুলো থেকে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কল করে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভেরিফিকেশনের নামে তাদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করে এবং দাবিকৃত অর্থ অন্যের নামের রেজিস্ট্রেশনকৃত বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী, পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত আনসার সদস্য, পিয়নসহ নানান লোকজন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রটির মূল হোতা গ্রেপ্তারকৃত আসামি বেলাল, জসিম।
(ঢাকাটাইমস/৬মে/এলএম/এফএ)

মন্তব্য করুন