কোপার ফাইনাল: দর্শকদের বিশৃঙ্খলার সময় কী চলছিল আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ড্রেসিংরুমে

পর্দা নামলো কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরের। যেখানে ফাইনালে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো কোপার শিরোপা ঘরে তুলেছে মেসির আর্জেন্টিনা। তবে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ফাইনাল শুরুর আগে তৈরি হয় তুমুল হট্টগোল। কলম্বিয়ান দর্শকদের বড় একটি অংশ নাকি বিনা টিকিটেই স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল, এমনকি অনেকে নিরাপত্তা বেষ্টনি টপকে নানা জায়গা দিয়ে গ্যালারিতেও প্রবেশ করেন বলে শোনা যাচ্ছে। সে সময় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার ডাগআউটেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে ফাইনাল শেষে কথা বলেছেন দুই দলের কোচ।
জানা গেছে, ম্যাচ শুরুর আগে নির্ধারিত সময়ে গেট খুলে দেওয়ার পর স্টেডিয়ামে উচ্ছৃঙ্খল কলম্বিয়ান ভক্তদের তোপের মুখে পড়ে মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা। কলম্বিয়ান অধ্যুষিত সেই অঞ্চলের অনেকেই ফাইনালের ভেন্যুতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। ফলে তৈরি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের। স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধ্য হন টিকিটবিহীন কলম্বিয়ান ভক্তদের ওপর চড়াও হতে। অবশ্য পুরোপুরি প্রটোকল মানতে পারেননি হার্ডরক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ। ফলে কলম্বিয়ান ভক্তদের অনেকেই ঢুকে পড়েছেন বিনা টিকিটে।
পুরো বিষয়টি নিয়েই সেখানে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। অর্থাৎ ফাইনালকে কেন্দ্র করে বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েও বিতর্ক এড়াতে পারেনি কনমেবল। চরম বিপাকের মাঝে পড়ে আয়োজকরা তাৎক্ষণিকভাবে স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর হার্ড রক স্টেডিয়ামে ফাইনাল পিছিয়ে দেয়া হয় আধঘণ্টার জন্য। কিন্তু তাতেও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় খেলা মাঠে গড়ায় প্রায় দেড়ঘণ্টা পর। যেখানে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র হওয়ার পর, ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ১১২তম মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজের একমাত্র গোলে পরে ১-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়।
পরবর্তীতে ম্যাচের আগে হওয়া বিশৃঙ্খলা নিয়ে কলম্বিয়ান কোচ নেস্তোর লোরেঞ্জো বলেন, তিনি বলেছেন, ‘একবার ভাবুন তো, লকার রুম থেকে আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনের খোঁজ নিচ্ছিলাম। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। তারা কোনো সমস্যায় পড়েছে কিনা। নিরাপদ আছে কিনা। খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমরা আমাদের দলের খেলোয়াড়দের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। তারপরও তারা বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফাইনালের আগে সবকিছু সেকেন্ড টু সেকেন্ড মেনে চলা হয়। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, দলীয় মিটিং, স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা, মাঠে আসা। এরপর আপনাকে শুনতে হয় যে ম্যাচ আধাঘণ্টা পরে শুরু হবে। অপেক্ষা করুন। এরপর ৪৫ মিনিট, এরপর এক ঘণ্টা! এরকম হলে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। আমি আবারও বলছি এটা উভয় দলের জন্যই সমস্যা তৈরি করেছিল। এ বিষয়ে আমি কেবল অভিযোগ দিলাম। কোনো অজুহাত দাড় করাতে চাচ্ছি না।’
এমন পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মাঝেও বেশ চাপ তৈরি হয় বলে জানান শিরোপাজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যাখ্যা করা কিংবা ওই সময়ে বোঝা কঠিন ছিল, ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের বাইরে পুরো একঘণ্টা অপেক্ষায় ছিল, চিন্তা ছিল কখন পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আসবে। এই অবস্থায় আমরা ম্যাচ খেলতে গিয়েছি। সবাই যার যার পরিবারকে বার্তা পাঠাচ্ছিল, কিন্তু বেশিরভাগেরই উত্তর আসছিল না। পরে বাইরের ভিডিও দেখেছি, পুরো অবস্থা সম্পর্কে ততক্ষণে সবাই জেনে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় কলম্বিয়ান ফুটবলারদেরও একই অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। আমরা আসলেই বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটছে। এটি খুবই অদ্ভুত ও বিরক্তিকর পরিস্থিতি।’
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুলাই/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন