জাবিতে শোক প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌনমিছিল

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সরকার কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শোক পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। তবে এই শোক কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করে 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে মৌনমিছিল করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনের শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়।
জনসংযোগ দপ্তর প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত আজ শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এছাড়াও শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মসজিদে দোয়া, মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।'
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন, আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে ও রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে মৌনমিছিল করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। এসময় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সাথে সংহতি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মৌনমিছিল শুরু হয়। সেখানে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক ও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। মিছিল নিয়ে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। দুঃখের সাথে সেই দায় নিয়েই বলতে হচ্ছে সকল রাজনীতিবিদ স্পষ্টভাবে একটি বার্তা বুঝে নিন, সংখ্যা কোন বিষয় নয়। যখন একটি শিশুর লাশ পড়ে যায় তখন সকল সচেতন মানুষ একত্রিত হয়ে যায়। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন আমাদেরকেও বাঁচান।’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। ৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘গত দুইদিন আগে ছয় সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। এ আন্দোলনটি ছাত্র সমাজের আন্দোলন। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না। ’তিনি আরো বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহীদদের তথা যাদের জন্য শোক ঘোষণা করেছে তাদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্র সমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।’
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনারও নিন্দা জানানো হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।
(ঢাকা টাইমস/৩০জুলাই/এসএ)

মন্তব্য করুন