থমথমে অবস্থা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৪৭

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনায় গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপরেই শুরু হয়েছে চারদিকে কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগের মিছিল। বাদ যায়নি দেশের ক্রীড়াঙ্গনও।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদি বিদায় নিয়েছেন সময়ের আগেই। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনেক উধ্বর্তন কর্মকর্তা ও বাফুফের অনেক উধ্বর্তন কর্মকর্তাই চলে গেছেন আত্মগোপনে। বাংলারদেশের অন্যান্য ফেডারেশনগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। বেশিরভাগ ফেডারেশনেই ঝুলছে তালা। যার ফলে অচলবস্থা তৈরি হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।

বিদায়ী সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন বহুদিন ধরেই ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নিলেও ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এখনও তিনিই। কারণ বিসিবির সভাপতির পদে সরকার নিয়োগ দেয় না। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হয় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। পরে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্য থেকে তাদেরই ভোটে নির্বাচিত হন বোর্ড সভাপতি। তবে নির্বচন কারা করবেন সেখানে যে সরকারের হাত থাকে তা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।

পাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। তার নেতৃত্বাধীন বিসিবি অনেক ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় দলের একসময়ের নিয়মিত ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেনদের মতো তারকারা। ইমরুলের দাবি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও ক্ষমতার কালো থাবা থেকে মুক্ত করতে হবে।

জনগণের তোপের মুখে অন্যান্য মন্ত্রী এমপিদের মতো নিখোঁজ আছেন পাপনও। জানা গেছে, গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি। বিক্ষুব্ধ জনতা তার ভৈরবের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত আত্মগোপনেই আছেন তিনি। যার ফলে সভাপতি ছাড়াই চলছে বিসিবি।

দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ বাফুফে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন কাজী সালাহউদ্দিন। তার নেতৃত্বাধীন ফেডারেশনটির নির্বাহী কমিটির নির্বাচন হতে পারে আগামী ২৬ অক্টোবর। ফুটবলে কাজী সালাউদ্দিন সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না হলেও ছিলেন প্রভাবশালী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। দেশের ফুটবল ইতিহাসেও সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন নিঃসন্দেহে। তবে বাফুফে চেয়ারম্যানের পদে বসার পরে হয়েছেন নিন্দিত।

সভাপতি সালাউদ্দিন, নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ আর সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগ চেয়ে গত সপ্তাহে তাদের আলটিমেটাম দিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস। সে দাবির পুরোটা পূরণ না হওয়ায় গত রবিবার মার্চ টু বাফুফে কর্মসূচি পালন করে তারা। সেখানে বিক্ষোভ প্রকাশ করে সংগঠনটি।

তবে সেই আলটিমেটামকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না ২০০৮ থেকে বাফুফের সভাপতি পদে থাকা সালাহউদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন পদত্যাগের ইচ্ছে নেই তার। আরও একবার নির্বাচন করতে চান তিনি।

আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪) এবং বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদও (যশোর-৩) নেই কোনো খবরে। সালাম মুর্শেদী অবশ্য নিজের পদত্যাগ করার খবর জানিয়েছেন। তারপরেই অবশ্য খোঁজ নেই তার।

বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মকর্তা। বাফুফে সদস্য সাইফুল, ওয়াদুদ পিন্টু, হারুনর রশীদ,সত্যজিৎ দাশ রুপু সহ অনেকে আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নানা পদে রয়েছেন।

সাবেক রেফারি ও বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি বীর বাহাদুরও নির্বাচিত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত বীর বাহাদুর। তবে সরকার পতনের পর তারা কেউই আসেননি জনসম্মুখে।

ক্যাসিনো কাণ্ডে আলোচিত বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ক্ষমতার পটপরিবর্তনে আত্মগোপনে চলে গেছেন। জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার হিসেবে জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল ক্যাসিনো কাণ্ডে আলোচিত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের।

সাবেক হকি তারকা আরিফুল হক প্রিন্স ফেসবুক পোস্টে মমিনুল হক সাঈদ, সাবেক খেলোয়াড় মাহবুবুল এহসান রানা, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং হকি লিগ কমিটির সম্পাদক খাজা তাহের লতিফ মুন্নার নামে টিক দিয়ে লিখেছেন, ‘এরা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে।’ এ নিয়ে হকি অঙ্গনেও চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে; যিনি বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মুখ্যসচিব পদ হারানোর পর ফেডারেশনের শীর্ষ কর্মকর্তার পদ আদৌ থাকবে কি না—এখনো নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে,

এ পদও থাকবে না। এদিকে অ্যাথলেটিকসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আজ রাজধানীর এক হোটেলে মিলিত হচ্ছেন অ্যাথলেটিকসের সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড় এবং সংগঠকরা।

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন মেরূকরণ। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অব্যাহতি দেওয়ার পর অস্বস্তি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনে। পুলিশ প্রধান হিসেবে কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। নতুন পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মো. ময়নুল ইসলাম। ধারণা করা হচ্ছে, কাবাডি ফেডারেশনের শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসন্ন। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে পুলিশ দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে; যিনি কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে হাবিবুর রহমান আদৌ বহাল থাকবেন কি না, নিশ্চিত নয়।

ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের বাকি সব ফেডারেশনের সভাপতি মনোনীত সরকার থেকে। হকি, সাঁতারে সামরিক দুই বাহিনীর প্রধান সভাপতি মনোনীত হন। অন্য ফেডারেশনগুলোতে সরকার মনোনীত আমলা, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব মনোনীত করে। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সভাপতি পদে পরিবর্তন আসছে এটা প্রায় নিশ্চিতই।

নতুন নেতৃত্বে যিনিই আসুন, ক্রীড়াপ্রেমীদের মনের চাওয়া, যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রীড়াঙ্গনের হাল ধরুক। ক্রীড়াঙ্গনে থাকুক ক্রীড়াঙ্গনের লোক।

(ঢাকাটাইমস/১৩ আগস্ট/এনবিডব্লিউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :