আখাউড়ায় আ.লীগ নেতার ‘সহকারী লাইব্রেরিয়ান’ স্ত্রী কলেজের অধ্যক্ষ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জাহানারা হক মহিলা কলেজের প্রভাষকদের এড়িয়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী লাইব্রেরিয়ান (বর্তমানে শিক্ষক পদমর্যাদা) তানিয়া আক্তার। তিনি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য অপসারিত পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী।
এ নিয়ে প্রভাষকদের মাঝে অসন্তোষ থাকলেও এত দিন মুখ খুলতে পারেননি কেউ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অধ্যক্ষ পদে পরিবর্তনের আশা দেখছেন বৈষম্যের শিকার শিক্ষকরা। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন।
জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহা. শাহজাহান মিয়া মারা যান। এরপর কলেজ কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রভাষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকার বোর্ডে তার অবস্থান ১৩। আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে অধ্যক্ষ করেন।
একটি সূত্র জানায়, তানিয়া আক্তারকে অধ্যক্ষ করতে কৌশলে কলেজের ১৩ জন প্রভাষকের কাছ থেকে ‘দায়িত্ব নিতে অপারগ’ মর্মে দরখাস্ত নেওয়া হয়।
২০১১ সালে আখাউড়া পৌরশহরের নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালু করে ‘নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ’ নামে পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালে স্কুল থেকে কলেজটি আলাদা করা হয়। স্কুলের ভূমিতে কলেজের কার্যক্রম চললেও কলেজের নাম ও প্রতিষ্ঠাতার নাম পাল্টে যায়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুুল হকের মায়ের নামে ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা হয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল।
২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে ১১ জন প্রভাষক ও তিন জন কর্মচারী এর অন্তর্ভুক্ত হন। এর মধ্যে তানিয়া আক্তারের (সহকারী লাইব্রেরিয়ান) পদটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। তিনি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ কলেজে যোগ দেন।
কলেজ কমিটির তৎকালীন সভাপতি আনিসুল হক এবং তাকজিল খলিফা কাজলের পরামর্শে সাময়িক সময়ের জন্য তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয় বলে জানান কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক মো. ইলিয়াস মুন্সী। পরে নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন সভাপতির অনুপস্থিতিতে ইউএনওর পরামর্শে কলেজের কার্যক্রম চলছে।
এ ব্যপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল তানিয়া আক্তারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কলেজের প্রভাষক সুভাষ চন্দ্র দাস জানান, তার (তানিয়া) সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতির উন্নতি হলে তিনি কলেজে আসবেন।
জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, ‘জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রভাষক থেকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম। এ ক্ষেত্রে কলেজ কমিটির রেজুলেশন না দেখে বলতে পারব না কীভাবে লাইব্রেরিয়ানকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দরখাস্ত দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন