অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার পথে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে

গত ৫ই আগস্ট, ২০২৪ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। এই নতুন সরকার- যা ছাত্র-জনতার সমর্থনে গঠিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে গঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক আমলাদের সমন্বয়ে গঠিত এই সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্তর্জাতিকভাবে ক্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নেতৃত্বে এই নতুন সরকার গঠনের পরপরই দেশজুড়ে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই সরকারের প্রতি অগাধ আস্থা প্রকাশ করেছে এবং নতুন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তারা।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই একের পর এক ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ আমাদের নজরে আসছে। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কিছু ব্যক্তিবর্গ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে, আনসার সদস্যদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং সচিবালয়ে তাদের অপ্রত্যাশিত আচরণকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই নতুন সরকারের প্রতি অসন্তোষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে।
এখন সময় এসেছে এই ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়ার। সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং দৃঢ়তার সাথে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট দাবিদাররা তাদের অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে যে, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে দাবি-দাওয়া পেশ করতে হবে এবং সেই দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই সাথে, সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকল প্রকার মিছিল, মিটিং, সমাবেশ এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে, যাতে নতুন সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টির সুযোগ না থাকে।
আমরা আশা করি, জনগণের এই সরকার সমস্ত বাধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের পথে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের প্রতি জনগণের সহায়তা এবং সমর্থন রয়েছে, অবশ্যই স্বৈরাচারের কালো ছায়া পেছনে ফেলে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।
তবে এই পথচলায় জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো ষড়যন্ত্র বা অপপ্রচার তাদের মনোবল দুর্বল করতে না পারে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, যেকোনো ধরনের বৈষম্য এবং ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে, যাতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়।
যে স্বপ্ন নিয়ে জনগণ একটি নতুন সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে, যাতে তারা দেশের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। দেশ গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকার এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান: সিএসবি নিউজ, ইউএসএ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন