রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: আজ মনে করিয়ে দেয় হাজারো প্রাণের কান্না, বাঁচার আকুতি

[সাভারের রানা প্লাজা ধসের উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় তার নেতৃত্বে। শেষদিন পর্যন্ত তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এই উদ্ধারকাজে। প্রতিটি মুহূর্ত যেমন তিনি জীবিত প্রাণের আশা করেছেন, তেমনি দেখেছেন মরদেহের সারি, আহতদের আর্তনাদ। তারই সামনে রানা প্লাজার নিখোঁজ কর্মীদের স্বজনরা দিন-রাত হাহাকার করেন আশপাশে। একই সঙ্গে চাতক পাখির মতো আশা করে থাকেন এই বুঝি ধ্বংসম্তূপ থেকে উদ্ধার হয়ে আসছে তার প্রিয় মানুষটি। উদ্ধারকাজের ১৭তম দিনে এমনই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে সেখানে। রেশমা নামের এক পোশাককর্মীকে উদ্ধার করা হয় জীবিত অবস্থায়, যা আলোড়ন তোলে সারা দেশে। এর তিন দিন পর ১৩ মে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় উদ্ধারকাজ।]
আজ ২৪ এপ্রিল, রানা প্লাজা দিবস। ২০১৩ সালের এই দিনের স্মৃতি হয়তোবা অনেকেই ভুলে গেছেন। ভোলেনি সহস্রাধিক নিহত শ্রমিকের পরিবার, আরো কয়েক হাজার আহত মানুষ, ট্রমায়/ ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত কয়েক শ উদ্ধারকর্মী, ভুলিনি আমি।
সারা জীবন ফুসফুসের যন্ত্রণা মনে করিয়ে দেয় আমাকে দুঃসহ রানাপ্লাজা গার্মেন্টসের সেই ধ্বংসযজ্ঞ, হাজারো প্রাণের কান্না, বাঁচার আকুতি। আমি ছিলাম সেদিন ওই হাজার হাজার আহত-নিহতের মাঝে। আমি আছি এখনো জীবিত-মৃতদের মাঝে।
রানা প্লাজার ভয়াবহ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি। বিরাট অঙ্কের সাহায্য এসেছিল বিদেশিদের কাছ থেকে, স্থানীয় লোকজন অকাতরে দান করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। কোথায় সেই দানের অর্থ? কারা খেয়ে ফেলেছে শত শত কোটি টাকা?
আমি হাইকোর্টের নির্দেশে প্রধান হিসেবে কমিটি নিয়ে কাজ করি ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য। আমাদের প্রস্তাব ছিল ন্যূনতম ১৫ লাখ টাকা প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তের জন্য। ওই প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দেন বিজেএমইএ প্রতিনিধি। তারা বাংলাদেশের শ্রম আইনের দোহাই দেন। অথচ এই শ্রম আইন শ্রমিকবিদ্বেষী। আমাদের দেয়া ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কার্যকর করেনি স্বৈরাচারী সরকার।
রানা প্লাজা ধস ছিল লোভ, লালসা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবমর্যাদার প্রতি চরম অবহেলার নজির। এই দুর্ঘটনা ছিল মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের নিকৃষ্ট উদাহরণ। আমলা ও স্বৈরাচারী রাজনীতির দুর্নীতির নির্জলা দৃষ্টান্ত। আমার হারিয়ে যাওয়া সেই শ্রমিক ভাইদের স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ আপনাদের শহিদি মর্যাদা দান করুন।
দুনিয়ার মজদুর এক হও। শ্রমিক হত্যা বন্ধ করো। বিপ্লবী লাল সালাম।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, এলডিপি।
(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/মোআ)

মন্তব্য করুন