‘হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া’ সেই লিতুন জিরার এসএসসিতেও চমক

জন্ম থেকে দুই হাত ও দুই পা নেই। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মেধার কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনো বাধা হতে পারেনি লিতুন জিরার জীবনে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে আবারও প্রমাণ করল, শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানুষের আসল শক্তি মন আর সাহসে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকেই আনন্দে ভাসছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী লিতুন জিরা ও তার পরিবার। অসাধারণ ফলাফলের খবর শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেন মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, “জন্মের পর মেয়েকে নিয়ে অনেক রাত কেঁদেছি। কী করবে, কীভাবে বড় হবে—এই চিন্তায় ছিলাম। আজ সেই মেয়েই আমাদের গর্বের কারণ।”
লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান একজন কলেজশিক্ষক। ১৯ বছর ধরে তিনি এমপিওভুক্ত না হওয়া একটি কলেজে চাকরি করছেন। সীমিত আয়ের মধ্যেও মেয়ের জন্য করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। হুইলচেয়ারে করে কাদামাটি, ঝড়-বৃষ্টির পথ পেরিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছেন নিয়মিত। আজ সেই কষ্ট সফলতায় রূপ নিয়েছে।
লিতুন জিরা শুধু একাডেমিক পড়ালেখাতেই নয়, ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেছে নানা স্বীকৃতি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। পেয়েছে বৃত্তিও। পাশাপাশি রচনা, গান, ও অন্যান্য পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রমেও ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে পরপর দু’বার উপজেলা পর্যায়ে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়, একই বছরে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করে এবং খুলনা বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পায়।
লিতুন জিরার স্বপ্ন—একজন চিকিৎসক হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সে বলে,“আমি চিকিৎসক হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। সবার দোয়া আর সহায়তা পেলে আমি নিশ্চয়ই পারব।”
লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, “আমার মেয়ে এখন কলেজে ভর্তি হবে। সেখানেও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা চাই, তার স্বপ্ন যেন থেমে না যায়। সবার সহযোগিতা আর দোয়া দরকার।”
লিতুন জিরার এই অনন্য সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, এটি গোটা সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। যারা শারীরিক বা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে বলে ভাবে, তাদের জন্য লিতুন জিরা এক জীবন্ত উদাহরণ—ইচ্ছা শক্তিই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।
(ঢাকাটাইমস/১০ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন