অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রিয়াজুল হাসান: ‘মঙ্গল আসর’-এর আলোকিত স্বজন

অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রিয়াজুল হাসান, যিনি আমাদের আপনজন হিসেবে সম্মানের সাথে সম্রাট স্যার নামেও সুপরিচিত, একজন প্রগতিশীল এবং আলোকিত উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। যিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে অবিচলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রাথমিক শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে সক্রিয় শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন ভাবনার সূচনা করেছে। আমরা গভীর প্রত্যাশা নিয়ে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জ্ঞাপন করি মঙ্গল আসর-এর নিয়মিত আলোচক, সকলের পরম সুহৃদ, স্বজন অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান স্যারকে, যিনি অতি সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। শিক্ষাক্রমের বহুল প্রত্যাশিত ইতিবাচক পরিবর্তনে তিনি সফল হবেন বলেও প্রবল আশাবাদ প্রকাশ করছি। কারণ একজন আদর্শ শিক্ষক এবং সুদক্ষ শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কর্মজীবনে শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে সফলভাবে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে কলেজটির সাফল্যের কারণে তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন, যা তাঁর নেতৃত্ব এবং শিক্ষাপ্রশাসনে দক্ষতার প্রমাণ। আমরা মঙ্গল আসরের সদস্যরা প্রায় নিয়মিতভাবে প্রতি মঙ্গলবার রাতের অনলাইন আলোচনায় তাঁর প্রজ্ঞাময় কর্মজীবন থেকে উৎসারিত বক্তব্যে, প্রশ্নোত্তরে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত হচ্ছি। তাঁর অসামান্য মেধা, প্রজ্ঞা এবং আদর্শ শিক্ষকসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং এই পরিশ্রমী, সৎ এবং মানবিক মূল্যবোধের সুপ্রিয় স্বজনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
২.
৩. মঙ্গল আসরের মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে অধ্যাপক ড. এ.কে. এম. রিয়াজুল হাসান সম্রাট স্যারের মৌলিক মূল্যবোধের এবং নীতিগত জায়গার সাথে মিলে যাওয়ায় সম্রাট স্যারের সাথে মঙ্গল আসরের সংযোগ আরও গভীরতর করেছে। তিনি মঙ্গল আসরের একজন নিয়মিত আলোচক এবং তাঁর আলোচ্য বিষয়গুলো একইসাথে আমাদের যেমন ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ করে দেয়, অপরপক্ষে তাঁর গবেষণা দীপ্তজ্ঞানের আলোচনায় আমরা বরাবরই সমৃদ্ধ হই। আলোচক হিসেবে অংশীজনের ভিন্নমতকে মূল্য দিয়ে নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরার বিনয়ী ও যুক্তিবাদী প্রবণতা সকলের জন্যই অনুসরণীয় হয়ে ওঠে। ভাবনার স্বচ্ছতায়, ধারণার স্পষ্টতায় তার অবস্থান নিয়ে অবগত বলেই আমরা তাই আশাবাদী তাঁর আদর্শিক অসাধারণ নেতৃত্বে শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে, নতুন দায়িত্বে আগামীতেও যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। তাঁর হাত ধরে শিক্ষার উন্নয়নে যে সফলতা এসেছে, তা শুধুমাত্র শেরপুর সরকারি কলেজকেই নয়, বরং সমগ্র শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন মানদণ্ড সৃষ্টি করেছে।
৪. সম্রাট স্যার মঙ্গল আসরের একজন নিয়মিত আলোচক। মঙ্গল আসরে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাসহ স্থানীয় সরকার এবং শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, নানাবিধ প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তর নিয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। তিনি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতা, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং এর সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাই একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে সম্রাট স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক এবং প্রগতিশীল। তিনি প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেন। মঙ্গল আসরে তিনি প্রায়শই শিক্ষা কীভাবে শুধুমাত্র তথ্য প্রদান নয়, বরং মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা ও সৃষ্টিশীলতা শেখাতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর মতে, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং সমাজে সঠিক ভূমিকা পালন করার যোগ্যতা তৈরি করা। মঙ্গল আসরের আলোচনাগুলোতে সম্রাট স্যার শিক্ষার কার্যকর প্রয়োগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আলোকপাত করতেন। তিনি বলতেন, শিক্ষার মাধ্যমে কেবল জ্ঞানার্জন নয়, বরং মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, সততা, এবং দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা যায়। মঙ্গল আসরের প্রতিটি আলোচনায় সম্রাট স্যার যে গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞান প্রদান করতেন, তা শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারীদের নয়, বরং পুরো সমাজের চিন্তার ধারা বদলাতে সহায়ক বলে আমি মনে করি। সেই সাথে একজন গবেষক ও লেখক হিসেবে তিনি তাঁর যোগ্যতার সম্মান এভাবেই বৃদ্ধিও করেছেন।
৫. মঙ্গল আসরে সম্রাট স্যারের আলোচনায় বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে তাঁর আলোচনা ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর। সম্রাট স্যার সংবিধানকে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তা নিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বক্তব্যে সংবিধানের ভালো দিক এবং দুর্বল দিকগুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, যা অংশগ্রহণকারীদের নতুন করে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সম্রাট স্যার বলতেন যে বাংলাদেশের সংবিধান একটি প্রগতিশীল এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর দলিল। সংবিধানে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করতেন যে, সংবিধান দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রচিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন- যে সংবিধানের মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সংবিধান জাতির একতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। তবে সম্রাট স্যার সংবিধানের বেশ কিছু দুর্বল দিক নিয়েও আলোচনা করেন, যা বাস্তবায়নের সময় বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তিনি বলেন যে সংবিধানের কিছু ধারা এবং বিধান বাস্তবিক প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা অনেক সময় জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি করে।
৬.
মঙ্গল আসরের একজন সক্রিয়জন হিসেবে মনে করি, সম্রাট স্যার শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সমাজের উন্নয়নে তাঁর গবেষণা এবং লেখনীর মাধ্যমে যে প্রভাব ফেলেছেন, তা আমাদের সমাজের চেতনা ও মানবিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তাঁর লেখাগুলো আমাদের ভাবতে বাধ্য করে, আমাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত করে এবং আমাদের সমাজের অসংগতি দূর করতে অনুপ্রাণিত করে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ায় ‘মঙ্গল আসর’ সম্রাট স্যারকে জানাচ্ছে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং তাঁর কাজের সাফল্য কামনা করে সবসময় পাশে থাকবে। আশা করছি শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনিও আগের মতোই আমাদের মাঝে ‘মঙ্গল আসর’ আলোচনায় অংশ নিয়ে চিন্তাচর্চায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।
‘মঙ্গল আসর’-এর ন্যায় সৃজনী কর্মকাণ্ড আমাদের শিক্ষাক্রমে যুক্ত হয়ে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীদের জীবনকে আরো গতিময়, প্রাণবন্ত ও নেতৃত্ব গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে পারবে বলেও আমরা প্রত্যাশা করছি। সম্রাট স্যারের নেতৃত্বে এবং আদর্শে আগামী প্রজন্মও যেন সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে- এই আমাদের চাওয়া। সম্রাট স্যারের সুস্থ, সমৃদ্ধ জীবন ও কর্ম আমাদের আলোকিত করে চলুক এবং তাঁর নিরন্তর অবদানে আমাদের সমাজ বিশেষত শিক্ষা জগৎ আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাক, সকলের প্রত্যাশা পূরণ হোক।রাহুল আদিত্য: লেখক ও শিক্ষা-সংস্কৃতি সংগঠক

মন্তব্য করুন