রাজনীতিই ডোবালো সাকিবকে

রাজনীতিই কাল হলো সাকিব আল হাসানের। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবকে বিদায় নিতে হলো অত্যন্ত অসম্মানের সঙ্গে, যা কখনোই কাম্য ছিল না। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে সেরা ক্রিকেটারের এই নিয়তি আমরা কি কেউ কখনও কল্পনা করেছি? সম্ভবত না। যার ক্রিকেট জীবন বর্ণাঢ্য ও রঙিন তার বিদায়বেলা কীভাবে এত ফ্যাকাশে হয়! ভাবতে অবাক লাগে। কীভাবে হেরে গেলেন সাকিব? কেন হারলেন? মানুষের সমর্থন কেন এত দ্রুত হারালেন?
সম্ভবত রাজনীতিই ডোবালো সাকিব আল হাসানকে। যেই সাকিব ছিলেন আমজনতার প্রিয়, আচমকাই সেই সাকিব হয়ে পড়েছিলেন একটি বিশেষ দলের। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সাকিব যোগ দিলেন আওয়ামী লীগে এবং মাগুরা সদর থেকে বাগিয়ে নিলেন নৌকা মার্কার টিকিট।
রাজনীতিতে সাকিব এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। প্রাথমিকভাবে এটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু দেশের ইতিহাসের এক বিতর্কিত নির্বাচন সাকিব আল হাসানকে যে এভাবে বিতর্কিত করবে সেটা কি তিনি ভেবেছিলেন? যেই সাকিব ছিলেন আমজনতার, সেই সাকিব হয়ে গেলেন একটি পক্ষের। যার সাফল্য ছিল আকাশচুম্বী সেই সাকিবের পরিচয় হলো একজন ক্ষমতালোভী হিসেবে। যিনি ক্রিকেট থেকে সবই পেয়েছেন, অর্থবিত্ত, সম্মান, সাফল্য সব, তার কি চটজলদি এভাবে রাজনীতিতে আসা জরুরি কিছু ছিল? হয়ত ছিল। সাকিব চেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভেতরে থেকে আরও বিশেষ কিছু করতে।
সাকিব কি করতে পেরেছেন সেটা তিনি জানেন, কিন্তু সর্বশেষ মিরপুর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রাথমিক দলে তার নাম ঘোষণার পরে দেশে ফিরে আসতে না পারাটাই বলছে সাকিব কতটা অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সাকিবের নীরবতাই সাকিবকে অজনপ্রিয় করে তুলেছে দেশের মানুষের কাছে। বিদেশে বসে সাকিবের স্ত্রী সুখী জীবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন, যা সাকিবকে আরও বিতর্কিত করে তোলে।
সাকিব কিভাবে পারলেন নীরব থাকতে, সেটা তিনিই জানেন। কিন্তু তার এই নীরবতা তাকে এতটাই বিতর্কিত করে তুলবে সেটাই-বা কজন ভেবেছে।
বাংলাদেশে সাকিব অনিরাপদ। বাংলাদেশের কোটি কোটি ভক্তের কাছে সাকিব অনাহুত। এও এক বাস্তবতা। সাকিবকে যারা ভালোবাসেন, যারা পছন্দ করেন তারাও আজ দ্বিধায়। তারা প্রকাশ্যে এসে সাকিবের পক্ষে কিছু বলবেন সেটিও যেন তারা বলতে পারছেন না, বলছেন না। সব মিলিয়ে সাকিব কতটুকু তার যোগ্য সম্মান পেলেন সেটাও এক প্রশ্ন।
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন এবং পেয়েছেনও। তাকে রাষ্ট্র যেমন সম্মান দিয়েছে, দেশের অগণিত কোটি ক্রিকেটমোদি মানুষ দিয়েছে প্রাণ উজাড় করা ভালোবাসা। সাকিব এরপরেও নানাভাবে নিজেকে বিতর্কের মধ্যে জড়িয়েছেন।
বিশেষ করে সাকিবের একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারি বারবার তার ভাবমূর্তিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত করেছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ সাকিবের নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনার বিষয়বস্তু ছিল। এবং থেকে থেকে সাকিবের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও সাকিবকে দেশের লাখো-কোটি মানুষের মধ্যে তার নতুন পরিচয়ের জন্ম দিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, অসম্ভব প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসানকে মানুষ তাদের হৃদয়ে জায়গা দিয়েছিল। কিন্তু রাজনীতি এবং ক্ষমতার রাজনীতি সাকিবকে এমন এক জায়গায় ঠেলে দিলো যেই বিতর্ক থেকে সাকিব আল হাসানের নতুন করে ফিরে আসা কার্যত অসম্ভব। সাকিব কি পারবেন ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে ফিরে আসতে? দেখা যাক শেষমেশ কি হয়!
(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/এআরডি)

মন্তব্য করুন