ডিএনসিসিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছিলেন বরখাস্ত মেয়র আতিক

বিতর্কিত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছিলেন বরখাস্ত মেয়র আতিকুল ইসলাম। নিজের মেয়ে বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন হিট অফিসার পদে। চাকরি দিয়েছিলেন ভাতিজা, ভাগ্নেসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে।
ডিএনসিসির সঙ্গে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে— শক্তি ফাউন্ডেশন, ঐক্য ফাউন্ডেশন, অভয়ারণ্য এবং বিডি ক্লিন। এই চার সংস্থার সঙ্গেই আতিকের ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে শক্তি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন আতিকের শ্যালিকা হুমাইরা ইসলাম। বর্তমানে তিনি সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।
আতিক কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শক্তি ফাউন্ডেশনসহ এই চার সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের কাজ দেওয়া, অন্যান্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেতে সহায়তা করেছেন।
২০২২ সালে উত্তর সিটিতে পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন আতিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে চারজন বিশেষজ্ঞ থাকলেও নিজের বড় ভাইয়ের ছেলে ইমরান আহমেদ ছিলেন ব্যতিক্রম। বিশেষজ্ঞ না হলেও তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পান।
এরপর আবার মেয়ে বুশরা আফরিনকে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক মেয়র। সেই বিতর্কের মুখে মেয়রকন্যা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানায় ডিএনসিসি।
বুশরার পরামর্শে নগরীর বিভিন্ন আইল্যান্ডে কিছু গাছ লাগায় ডিএনসিসি। রাজধানীর কয়েকটি সড়কে গাড়ি থেকে ওপরের দিকে পানি ছিটিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম এই বৃষ্টির নামে উত্তর সিটি অন্তত দুই কোটি টাকা খরচ দেখায়।
২০২৩ সালের শুরুতে ডিএনসিসির ১৯তম বোর্ড সভা বৃক্ষরোপণের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুমোদন করে। ওই চুক্তির আওতায় উত্তর সিটিতে সবুজায়ন এবং পরিবেশ উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে শক্তি ফাউন্ডেশন।
পরে সবুজায়নসংক্রান্ত আরও একটি প্রকল্প দেওয়া হয় শক্তি ফাউন্ডেশনকে। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক হুমাইরা ইসলাম বরখাস্ত মেয়র আতিকুল ইসলামের শ্যালিকা। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছেন আতিকুলের ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেন, ভাগ্নে ইমরান এবং মেয়ে বুশরা আফরিন।
ভাগ্নে তৌফিকের মাধ্যমে ঠিকাদার ম্যানেজসহ সিটি করপোরেশনের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আতিক। ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তৌফিককে দ্বিতীয় মেয়র হিসেবে চিনতেন। তার কথায় কর্মকর্তারা ‘উঠতেন-বসতেন’। সিটি করপোরেশনের কোনো পদে না থেকেও সব কর্মকাণ্ডে তৌফিকের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এমনকি উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের নিজস্ব সভায়ও তিনি উপস্থিত থাকতেন। গত বছর ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণে ডিএনসিসির ১০ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন তৌফিক। গত বছর ১৩ থেকে ১৮ মার্চ বিশ্বব্যাংকের ট্রান্সফর্মিং ট্রান্সপোর্টেশনের ২০তম সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সাবেক মেয়রের নেতৃত্বে একটি দল যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ওই সফরেও সঙ্গী হন তৌফিক। গত বছর ১৮ থেকে ২৫ মে চীনে ওয়েস্ট বেইজড পাওয়ার প্লান্ট পরিদর্শনে আতিকের সঙ্গী ছিলেন তিনি। গত ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোরিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে নগর ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল সফরেও আতিকের সঙ্গী হন তৌফিক।
উত্তর সিটির ঠিকাদারদের সঙ্গে দেন-দরবার মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। ফরিদ উদ্দিনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন। এই সংগঠনের ব্যানারে বেশ কয়েকটি প্রগ্রাম বাস্তবায়ন করেন আতিক। ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশেষ অনুদান হিসেবে এই সংগঠনকে অন্তত ২২ লাখ টাকা দেয় ডিএনসিসি।
(ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/এসএস/এজে)

মন্তব্য করুন