‘গুটিকয়েক কর্মকর্তার দায় পুরো ফরেন সার্ভিস বহন করবে না’
রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনেকটা প্রস্তুতি পর্ব চলছে আমার। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কাজ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতের আদানপ্রদান হচ্ছে। অনেকের অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব এবং ইন্টেলেক্ট মুগ্ধ করার মতো।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সাথে আমার মেলামেশা দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশে থাকতে কূটনৈতিক রিপোর্টিং, টেলিভিশনে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন ছাড়াও নানা উপায়ে কাজের সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
আর জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট কভার করার সুবাদে বিশ্বের তাবৎ কূটনীতিকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে কাছ থেকে দেখার এবং তাদের কর্মের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। মাঝে দুই বছর কনসালট্যান্ট হিসাবে বিশ্বে ব্যাংকের সদরদপ্তরে আনাগোনা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রেস কোরের হয়ে বাইরে যাওয়ার দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া করিনি। ছোট-বড় অনেক দেশের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কস্থ মিশন নানারকম অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রণ জানায়।
যা বলছিলাম, বাংলাদেশের কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব ও চৌকসতা যেমন প্রশংসাযোগ্য, তেমনি আছে চরম অপেশাদার, বিবেকবর্জিত এবং শেখ হাসিনাকে দানবে পরিণত করতে সহায়তাকারী কিছু ব্যক্তি। এরকমই একজন, বেলজিয়াম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে একই সঙ্গে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, আজ দায়িত্ব ছেড়েছেন শুনে প্রীত হয়েছি।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। উইলসন সেন্টারে মাইকেল কুগেলম্যানের সঞ্চালনায় ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজের বই ‘ভোটিং ইন এ হাইব্রিড রেজিম’-এর উপর আলোচনা চলছে। বইটিতে ফোকাস করা হয়েছে ২০১৮ সালের ভোটে জালিয়াতি। আয়োজকের সাথে আমিও জড়িত।
আলোচনার এক পর্যায়ে তৎকালীন ওয়াশিংটন দূতাবাসে নিযুক্ত মাহবুব হাসান সালেহ একদল যুবলীগকর্মী নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন এবং সামনের সারিতে বসেন। তাকে ঘিরে বসেন সঙ্গে আসা সাঙ্গপাঙ্গরা। অনেকটা জোর করে ফ্লোর নিয়ে রীয়াজ ভাইয়ের উদ্দেশ্যে আলোচ্যসূচি বাদ দিয়ে তীর্যক এবং অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। এতে বইয়ের লেখক Ali Riaz সহ আলোচকরা হতচকিত হয়ে যান।
মুক্তমতে বিশ্বাসী মডারেটর তাকে কথা বলার সুযোগ দিলেও তিনিসহ সকলে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন—এ কেমন কূটনীতিক! অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই তিনি দলবল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে বিক্রির জন্য রাখা তিনটি বই জোর করে নিয়ে যান।
এটি শুধু একটি ঘটনা নয়। উইলসন সেন্টার ছাড়াও প্রেসক্লাব, আটলান্টিক কাউন্সিল ইত্যাদি স্থানে যখনই কোনো অনুষ্ঠান হতো, আমন্ত্রণ ছাড়াই যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা ঢোকার চেষ্টা করতেন এবং তাদের সাথে মিলেমিশে মাস্তানের মতো আচরণ করতেন এই শ্রেণির কর্মকর্তারা। এমন গুটিকয়েক কর্মকর্তার দায় নিশ্চয় পুরো ফরেন সার্ভিস বহন করবে না!
মুশফিকুল ফজল আনসারীর ফেসবুক পেজ থেকে
(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন