সাক্ষাৎকারে পিলখানায় শহীদ-তনয়

খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের পর শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করে হাসিনা সরকার

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০১
অ- অ+

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন। ঘটনার ১৫ বছর পার হলেও নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা যায়নি। বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে সম্প্রতি কমিশন গঠনের কথা জানায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এদিকে জানা যাচ্ছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারগুলোর আবাসনের নাম করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। কিন্তু অভিযোগ উঠছে এসব পরিবারের অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

পিলখানার ঘটনায় বাবা হারানো বিডিআরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান ঢাকাটাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন তার পরিবার কীভাবে বিচার বঞ্চিত হয়েছে। কোন কৌশলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বাবাকে হারিয়ে আশরাফুল আলম হান্নানেরা গত ১৫ বছরের বেশি সময় কী পরিস্থিতিতর ভেতর দিয়ে গেছেন কিংবা সরকার থেকে কী ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন?

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘সহযোগিতার চেয়ে বড় বিষয় হলো ১৫ বছরে আমরা কতভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরে অনেক ধরনের মানুষিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বাবাসহ যারা পিলখানায় মারা গেছেন তাদের মৃত্যু নিয়ে আমরা কোথাও কোনো কথা বলতে পারিনি। এই হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, অপরাধীদের শনাক্ত, তাদের নাম প্রকাশ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক সেটা চাইতে পারিনি ৫ আগস্টের আগে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে এখন তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন- জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘আমরা সব সময় এটাকে বিডিআর বিদ্রোহ না বলে পিলখানা হত্যাকাণ্ড বা সেনা হত্যাকাণ্ড বলতে চাই। কারণ এটা পরিকল্পিত হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই তো স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এতে ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি করছি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা তারা দ্রুত সময়ে তদন্তের মাধ্যমে তুলে আনবেন।’

সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনে পিলখানায় শহীদ পরিবারের এক বা একাধিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘আমরা সঠিক তদন্ত চাই। শহীদ পরিবারকে সংযুক্ত করা হলে কমিশনের তদন্ত অধিকতর স্বচ্ছতা পাবে বলে মনে করি।’ এই হত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেকে (আইসিসি) অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শেখ হাসিনার সরকার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করে। সে সময় সরকার বলেছিল, সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত পরিবারের সদস্যদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘পিলখানার মতো জায়গায় যখন গোলাগুলি হচ্ছিল, তখন কিছু মিডিয়া প্রচার করছিল বিডিআরে চাল-ডাল কর্মসূচির টাকা নিয়ে বিদ্রোহ করা হয়েছে। কিন্তু যখন মানুষ দেখল পিলখানায় অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, তখন এর পেছনে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সামনে আসে।

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মইনুল রোডের বাড়িটিকে তখনকার শেখ হাসিনার সরকার এই হত্যাকাণ্ডের ইমোশনের বলি বানায়। বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে থাকতে দেবে না সরকার। তারা চেয়েছিল ওই বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করবে।

আওয়ামী লীগ সরকার বলতে শুরু করল ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িতে কেন খালেদা জিয়া থাকেন। বিডিআরে যারা মারা গেছেন তাদের আবাসন দেবে সরতার। খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় দেশবাসী যাতে ফুঁসে না ওঠে, এ জন্য শহীদ পরিবারগুলোর ইমোশনকে কাজে লাগানো হয়। তৎকালীন সরকার খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বের করে দেয়।

এরপর শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে সরকার প্রতারণা করে বলে জানান কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান। বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল করা, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নষ্ট করা এবং বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমাদের শহীদ কোনো পরিবারকে ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। না কোনো প্লট, না কোনো ফ্ল্যাট। বিগত সরকারের আকাঙ্খা ছিল বা কূটকৌশল ছিল বেগম জিয়াকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আমাদের সামনে রেখে তারা সেই কাজটি করে।’

আশরাফুল আলম হান্নান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাবা হারানোর স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন তিনি।

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন সকালে বাবা আমার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আমাকে ডেকে বলেছিলেন আমি যেন ভার্সিটিতে যাবার সময় নাস্তা করে যাই। এই বলে তিনি ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে যান। আমার বাবা নুরুল ইসলাম বিডিআরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর ছিলেন। বিডিআর দরবার হলে হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে আমার বাবাই প্রথম সেখানে ছুটে যান এবং জওয়ানদের বাধা দেন। তাকেও ছাড়েনি তারা। আওয়ামী লীগ আমলে আমাকে শুনতে হয়েছে- তোমার বাবা কেন সেখানে বাধা দিতে গেলেন? কোনো ধরনের সুবিধা তো দূরে থাকুক সরকার আমাদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থাও করেনি। বিষয়টি আমি আদালতকে অবহিত করেছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বার্ষিক ওরস শুরু শনিবার
আমিরাত সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা 
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাইজমানি ঘোষণা, কত পাবে চ্যাম্পিয়ন দল
সিরাজদিখান থানায় হামলা: ৬০ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ২ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা