স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: এস. এম. মঞ্জুরুল হক 

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ২২:১৫ | প্রকাশিত : ০৬ মে ২০২৪, ২২:০৩

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রকৌশলীরাই দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছিলেন।

দেশের প্রকৌশলীদের পেশার সংগঠন আইইবির ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা টাইমসকে এসব কথা বলেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, প্রকৌশলী এম এ জাব্বারের নেতৃত্বে ৬৮ জন প্রকৌশলীর ঐকান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর আইইবি একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান যার সদরদপ্তর বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আইইবি হলো বাংলাদেশের গর্ব অহংকার।

দীর্ঘ ৭৬ বছরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ইঞ্জিনিয়ারদের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশলীদের সমস্যার সম্ভাবনা নিয়েও কাজ করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনেও ইঞ্জিনিয়াররা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন যাত্রা শুরু করে। প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, বিশ্বের নিত্যনতুন, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেওয়া, বিদেশি প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা করা এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ৭৬ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের সব প্রকৌশলী বিশেষজ্ঞ আইইবির সদস্য। যখনই কোনো টেকনিক্যাল সাজেশন সরকারের পক্ষ থেকে আসে তখন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন তাদেরকে টেকনিক্যাল সাজেশন দিয়ে থাকে। যেমন পদ্মা ব্রিজের প্যানেল অব কনসালটেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী নানান কৌশলগত পরামর্শ দিয়েছেন এই সেতু বাস্তবায়নে। দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোতে সুপার কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকেন প্রকৌশলীরা। এটাই হলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের অর্জন। আইইবির সাতটি ডিভিশন আছে। সাতটি ডিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, গোলটেবিল, জাতির ক্রান্তিলগ্নে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে থাকে। আইইবির ১৮টি কেন্দ্র, ৩৪টি উপকেন্দ্র, ১৪টি ওভারসীজ চ্যাপ্টার আছে যা গুরুত্ব সহকারে প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছে।

একজন প্রকৌশলী একদিকে যেমন প্রকৌশলী অন্যদিকে তেমনি পরিকল্পনাবিদও। প্রকৌশলীরা তাদের ভাবনাগুলো যথাযথ উপায়ে সরকারের কাছে পাঠান। সেসব পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের পলিসি লেভেলে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারদের চারটা বোর্ড অব অ্যাক্রিডিয়েশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন রয়েছে, যেটা মানসম্মত প্রকৌশলশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে।

তিনি বলেন, বোর্ড অব অ্যাক্রিডিয়েশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন (বিএইটিই) যেটার প্রাইভেট ও পাবলিক প্রকৌশল শিক্ষা যাতে মানসম্পন্ন হয় সেটা নিয়ে তারা কাজ করে। বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন বোর্ড, যারা রাজউকের ডিজাইন করে সেটা তারা কমপিটেন্স টেস্ট নেয় এবং প্রিন্স ডিগ্রি দেয়। সেই প্রিন্স পরীক্ষার মাধ্যমে কারা রাজউকের স্ট্রাকচার ডিজাইনের সিগনেচার করতে পারবেন সেই কমপিটেন্স টেস্টের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। অকুপেশনাল সেফটি বোর্ড অব বাংলাদেশ (ওসেবিবি) ইথিক্স বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।

‘বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ও স্ট্রাকচার ফেইলুরের ঘটনা ঘটে। ওয়েজ অকুপেশনাল সেফটি বোর্ড আইইবির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন সেফটি ইস্যু নিয়ে কাজ করে। এছাড়া একটি ইঞ্জিনিয়ার স্টাফ কলেজও আছে। এখানে ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে কাজ করা হয়। তাদেরকে যুগোপযোগী ও বিদেশি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা যেন কম্পিটেবেল হয়ে ওঠে সেজন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে।’

‘এছাড়া আমাদের বিভিন্ন ওভারসিজ চ্যাপ্টার আছে। তারা বিদেশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিভিন্ন টেকনোলজি এক্সচেঞ্জের কাজগুলো করে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। ২৩টি দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে আইইবির। তাদের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে এক্সচেঞ্জের কাজ করি, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়। চোখ উপযোগী বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং অলওয়েজ স্মার্ট। ইঞ্জিনিয়ার সায়েন্সকে প্রাকটিক্যাল প্রয়োগ করে। একজন ইঞ্জিনিয়ার স্মার্ট না হলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই ক্ষেত্রে একজন ইঞ্জিনিয়ার তার দক্ষতা কর্মের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অলওয়েজ স্মার্ট। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা স্মার্টভাবে গড়ে তোলার জন্য সবসময় প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে।

এই প্রকৌশলী আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আমি যখন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই তখন নতুন করে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করি, যা ইঞ্জিনিয়ার সেক্টরকে ও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। সেই কাজ বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে। প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়ন, পেশাজীবীদের বিভিন্ন সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে কাজ করা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে।

‘আন্তর্জাতিকভাবে উইমেন ইঞ্জিনিয়ারিং একটা চ্যাপ্টার আছে, যা এতদিন ছিল না, এবার আমরা উইমেন ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যাপ্টার ইন কর্পোরেট করেছি সংবিধানে। ফিউচার লিডারশিপ তৈরি করার জন্য, ইয়াং লিডারশিপ চেপ্টার ওপেন করেছি। আগামী দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যাপ্টারে কারা নেতৃত্ব দেবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার আমরা ইয়ং লিডারশিপ চ্যাপ্টার তৈরি করেছি, সংবিধানে ইন করপোরেট করেছি। এছাড়া আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।’

স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট জনশক্তি তৈরিতে আইইবির কর্মপরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবির) সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রকৌশলীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আইইবি বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রকৌশলীরাই দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে কাজ শুরু করেছিলেন। বিদ্যুৎ সেক্টরে, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই প্রকৌশলীদেরই ভূমিকা ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো দেশের প্রকৌশলীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতির পিতার বৈষম্যহীন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন ছিল এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রকৌশলীরা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার প্রতি জোরদার আহ্বান জানিয়ে প্রকৌশলী এস. এম. মঞ্জুরুল হক বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। ভালো র‌্যাংকিং না থাকার কারণে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় অনেক পিছিয়ে। এটা শুধু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তা নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেটও কম থাকে। গবেষণার জন্য যে ফান্ড থাকা দরকার তা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় পিছিয়ে থাকার কারণে র‍্যাকিংয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববদ্যালয়গুলো। পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণায় জোর দিতে পারলে বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও অনেক এগিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারেরও এদিকে নজর দেওয়া দরকার।

(ঢাকাটাইমস/৬মে/জেএ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :