ময়মনসিংহের যে অচেনা পথে শিলং পালান শামীম ওসমান

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬| আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৩
অ- অ+

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূল প্রায় সব নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান, এটি পুরনো কথা। অনেক নেতা দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো খবর আসে কারও বিদেশযাত্রার কথা। কেউবা আটক হচ্ছেন বিমানবন্দর কিংবা সীমান্তে। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক শামীম ওসমান অভ্যুত্থানের পরপরই নিরাপদে ওপারে পৌঁছাতে পারেন।

তার পালানোর যাত্রাপথের কথা ইতিমধ্যে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তিনি বেনাপোল কিংবা আগরতলা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছেন- এত দিন এমনটাই জানতাম আমরা।

কিন্তু ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধান বলছে, তিনি এই দুই অতিপরিচিত পথ এড়িয়ে বেছে নেন কম গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত। ওই সূত্র শামীম ওসমানের যাত্রাপথের বিবরণ জানিয়েছে ঢাকাটাইমসকে।

সূত্রমতে, পালানোর সময় শামীম ওসমান একা ছিলেন। কারণ ছাত্র-জনতার দখলে উত্তুঙ্গ নারায়ণগঞ্জ। দুপুরের পর রাইফেলস ক্লাব থেকে চুপিসারে তিনি আশ্রয় নেন চাষাঢ়ার এক বাড়িতে। সেখান থেকেই রাতে বের হন ময়মনসিংহের সীমান্তের উদ্দেশে।

অবশ্য এই সীমান্ত দিয়েই ওপারে যান তার স্ত্রী সালমা লিপি ও ছেলে অয়ন। তবে আলাদা।

আমরা সূত্রের বর্ণনামতো ময়মনসিংহ থেকে কালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছার রাস্তাটির ভিডিও চিত্র ধারণ করি ময়মনসিংহ অঞ্চলের একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে। শামীম ওসমানের সেই সীমান্ত যাত্রা আমরা গল্পের ঢঙে তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।

ময়মনসিংহের গ্রামীণ পাকা সড়ক ধরে ছুটছে শামীম ওসমানের গাড়ি। দ্রুতই পৌঁছাতে হবে সীমান্তে। ভয়ার্ত চোখে বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের প্রতাপশালী মানুষটি, কেউ অনুসরণ করছে না তো। বাড়ির কথা মনে পড়ে। জনতা আগুন দিয়েছে তার সুরম্য ডুপ্লেক্স বাড়িতে। তবে দাদা আর নানার বাড়িতে বড় কোনো হামলা হয়নি। এখন বাপ-দাদার দোয়ায় নিরাপদে সীমান্তে যেতে পারলে বাঁচেন।

এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি পথে। স্ত্রী সালমা আর ছেলে অয়ন তার সঙ্গে নেই। তারা যাচ্ছে আলাদা। তারাও নিশ্চয়ই নিরাপদ আছে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে সীমান্তের ওপারে শিলংয়ে দেখা হবে তাদের সঙ্গে। সেভাবেই পরিকল্পনা করা।

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার অজ্ঞাত এক বাড়ি থেকে বোরকা পরে যখন রওনা হন, তখন রাতের আঁধার নেমেছে চরাচরে। ৫ আগস্ট সকালেও নিজের রাজনৈতিক আস্তানা রাইফেল ক্লাবে ছিলেন দলবল নিয়ে। অভ্যুত্থান ঘটে যাওয়ার পর সেখানে থেকে বেরিয়ে চাষাঢ়ার ওই বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। তাতে অল্পের জন্য রক্ষা পান। তার বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই রাইফেল ক্লাবে হামলা করে জনতা।

ওই বাড়িতে অবস্থানকালেই জানতে পারেন তার চাষাঢ়ার বাড়ি, ভাই সেলিম ওসমানের বাড়িতে জনতা ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে পারবেন কি না ভয়ে ছিলেন। এর আগে যতবার পালিয়েছেন, সরকারি বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিলেই হতো। এবার সব জায়গায় জনতার চোখ। তাদের রোষানল ছড়িয়ে আছে পথে পথে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে বেরোতে অনেক বেগ হতে হয় শামীম ওসমানকে। দু-তিনজন বিশ্বস্তজন আর একজন সীমান্ত দালালের সঙ্গে কথা বলে ময়মনসিংহের পথটা বেছে নেন ‘খেলা হবে’র বীরপুঙ্গব। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের এই স্থলবন্দরটি অনেকটা অপরিচিত। তবে অনেক টাকা দিতে হয়েছে দালালকে। তবে নিরাপদে সীমান্তের কাছাকাছি আসতে পেরেছেন। আর কিছুদূর গেলেই পৌছে যাবেন কাঙ্খিত গন্তব্যে। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের শিলং।

একটু মনমরা হন শামীম ওসমান। কী থেকে কী হয়ে গেল! দিন সাত-দশেক আগেও আন্দোলনের বেয়াড়া ছাত্র-জনতাকে ধাওয়া করেছেন অস্ত্র হাতে। ৩০ জুলাই এমনই শক্তির মহড়ার সময় মাথায় আঘাত পান। ব্যথাটা আছে এখনো। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের বেঠকে ছিলেন। পরদিন বিপুল অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ ছিল দলের। কিন্তু আর সাহস করেননি। রাজপথে বের হননি সেদিন।

সাইনবোর্ড থেকে রামপুরার রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা বাইপাস হয়ে গাজীপুর, এরপর ময়মনসিংহ। সেখান থেকে সীমান্তে আসার মাঝপথে ছেড়ে দেন গাড়ি। স্থানীয় সিএনজি আর ব্যাটারি রিকশায় যাচ্ছেন বর্ডারের দিকে।

মিষ্টভাষী ও বাকপটু শামীম ওসমান চুপচাপ। যদিও জাতীয় নেতা নন, তবে দেশের প্রায় সবাই তাকে চেনে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবে। মুখ বোরকায় ঢাকা বলে চালক চিনতে পারছেন না। তার গলার স্বর চিনে ফেলতে পারে বলে সারা পথ নীরব তিনি।

রাত আরও বাড়ে। মনটা ছটফট করে। পথ ফুরোতে চায় না। কাঠ-বাঁশের সাঁকো পেরোতে পেরোতে মনকে সান্ত্বনা দেন, আর বেশি দূর নয়। মনে পড়ে এভাবে আরও দুবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ২০০১ এবং ২০০৭ সালে। প্রথমবারও বোরকায় ঢাকা ছিল মুখ।

খেলা হবে- তার প্রিয় কথাটি মনের ভেতর ঘাঁই দেয়। তার মুখ থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখ হয়ে ‘খেলা হবে’ পেরিয়ে যায় দেশের গন্ডি। কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতারও প্রিয় স্লোগান হয়ে ওঠে- খেলা হবে। আসাম, মেঘালয় আর কলকাতায় তার নাম জানে অনেকে- ভাবতে একটু ভালো লাগে শামীম ওসমানের।

ভাবতে ভাবতে হালুয়াঘাটের বিভিন্ন গ্রাম পেরিয়ে একসময় পৌঁছে যান সীমান্তে। খেলা হবে শামীম ওসমান খেলার মাঠ ছেড়ে পা রাখেন সীমান্তের ওপারে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। মেঘালয়ে শিলংয়ে গিয়ে মিলিত হন স্ত্রী আর ছেলের সঙ্গে। তাদের নিয়ে চলে যান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। সেখান থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

অভ্যুত্থানের ঠিক এক মাস পর ৬ সেপ্টেম্বর শামীম ওসমানের দেখা মেলে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে। মাথায় তখনো আঘাতের চিহ্ন। নিজের এবং দলের প্রধান শেখ হাসিনার জন্য, যিনি দিল্লিতে সরকারের আশ্রিত, মিলাদ পড়ান নারায়ণগঞ্জের মিষ্টভাষী গডফাদার।

এরপর পাড়ি জমান দুবাই। সেখানে তার নিজের বাড়ি। রটে যায় ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনা উঠবেন তার ওই বাড়িতে। তবে সেটি আর ঘটেনি এখনো।

(ঢাকাটাইমস/১জানুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে সেনা অভিযান, জলদস্যু সাবুসহ গ্রেপ্তার ২
যে নিয়মে আম খেলে শরীরের ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
আট দিনের সফরে রাতে চীন যাচ্ছে বিএনপির প্রতিনিধিদল
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১-নীল জোনাকির আলো
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা