পুলিশ আশ্রয়দাতা হলে মানুষ অতীতের কর্মকাণ্ড ভুলে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা

পুলিশ বাহিনী যদি আশ্রয়দাতা হয়ে, তবে মানুষ তাদের অতীতের কর্মকাণ্ড ভুলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ দেখলে মানুষ ভয় পেত। পুলিশ হবে বন্ধু, পুলিশ হবে আশ্রয়দাতা। এই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নাই। কারণ সেই ১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারবো না। ১৬ বছরে কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে। রাতারাতি আমি পাল্টাতে পারবো না।’
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘মানুষ হিসেবে নিজেকে পাল্টাতে পারি, নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারি। যেই সরকার তোমাদের নিয়ে কাজ করছে, সেই সরকারের ইচ্ছা, তোমরা নতুন ভাবমূর্তি নিয়ে ফিরে আসো। যাতে করে মানুষ দেখে বলে, শুধু পুলিশ বাহিনী না, নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। দেখলে যেন মনে হয়, এই পুলিশ নতুন বাংলাদেশের পুলিশ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীদেরকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক বড় কাজ। আমাদের অবহেলার কারণে সমাজে এটা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের দেশের অর্ধেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কেউ নাই। রাস্তাঘাটে চলতে ভয় পায়। এটা কোন ধরনের কথা! তাদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের আইনি দায়িত্ব। নিজ নিজ এলাকায় সেটি করতে হবে। কোথাও যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে বহু সম্ভাবনার এই দেশ এখানেই শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটা ভূমিকায় আছি, সেখানে দেশের একটা পরিবর্তন হবে। নতুন বাংলাদেশ কথাটা আমরা বলি, কারণ পুরনো বাংলাদেশ একটা অন্ধকার যুগ। ভয়ংকর একটা যুগ। সেই ভয়ংকর একটা দিন থেকে সুন্দর ঝলমলে একটা দিনে আসতে চাই। সেটা হলো নতুন বাংলাদেশ।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর সমস্যা হচ্ছে, ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি হুকুম পেয়েছে, কাজ করেছে। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে তোমাদেরকে ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে (পুলিশ) অনেক দোষ দেয়, আমরা দেখিয়ে দেব— আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমরা ভালো মানুষ। দেখো আমরা কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তা মাথার মধ্যে রাখতে হবে যে, আমরা দেখিয়ে দেব। নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে আমরা এখানে বড় একটা ভূমিকা পালন করব। কারণ আমাদের কাছে আছে আইন এবং শৃঙ্খলা। এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখান থেকে দেশ উড়াল দেবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন— চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/এলএম/এজে)

মন্তব্য করুন