বিভাজন নয়, ফ্যাসিবাদ বিলোপে ঐক্য চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কোনো ঠাঁই নেই বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। গণহত্যার অভিযোগে দলটির বিচার এবং বিলোপে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত লম্বা একটি পোস্ট দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ঢাকা টাইমস পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো:
‘বিগত দেড় দশকের আওয়ামী স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে নির্মমভাবে পিষ্ট হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। আওয়ামী লীগের অন্যায়, অবিচার ও প্রহসনমূলক অপশাসনের দরুন তারা তাদের বহু সংখ্যক একনিষ্ঠ নেতাকর্মীকে চিরতরে হারিয়েছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণসহ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে বিগত দিনগুলিতে দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের উপর আওয়ামী লীগ চালিয়েছে নির্মমতম অত্যাচারের খড়গ।’
‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে সাধারণ শিশু-কিশোররাও শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী স্বৈরশাসনের দুর্দিন পেরিয়ে চব্বিশের সফল গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার চিরতরে বিলোপের স্বার্থেই সব নিপীড়িত দলকে এক মহান ঐক্যের সামনে হাজির করেছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান।’
‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কোনো ঠাঁই নেই। দল হিসেবে যে আওয়ামী লীগ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের আপামর মানুষের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করে গুম-খুন ও অন্যায়-অবিচারের রাজত্ব কায়েম করেছিল, সেই আওয়ামী লীগের আগামীর ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ অবশিষ্ট নেই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণ ও বিগত বছরে আওয়ামী অপশাসনের পেছনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের বিচারের দাবিই এখন বাংলাদেশের তামাম জনগণের মুখে-মুখে, অন্তরে-অন্তরে।’
‘একটি ব্যাপার আমাদের মনে রাখা দরকার, এত রক্ত বিসর্জনের পরে আমরা কেউই আর ৭১ ও ৯০-এর ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা যেমন চাই না আমাদের দেশে নতুন করে কেউ ফ্যাসিস্ট হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, তেমনই চাই না যে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে পুনরায় কোন বহিঃশক্তির আধিপত্য কায়েম হোক। দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে এই মহৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের সকলের একতা বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দল-মত নির্বিশেষে আমরা এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবো একই গন্তব্যের দিকে।’
‘বিএনপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী কোনো দলের সাথেই শিক্ষার্থীদের ভেদাভেদ নেই। তাছাড়া, এই গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি ব্যাপার দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছে যে, বিভেদ-বিভাজনের রাজনীতি কখনোই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
‘সুতরাং আমরা বিভাজনের বদলে ঐক্য চাই। অপশাসনের বদলে সুশাসন চাই। বাংলাদেশের মানুষ বহুকাল যাবৎ নানাবিধ দুর্দশায় দিনানিপাত করছে; আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই।’
‘পুনরায় বলি, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণে এই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য অপরিহার্য। সুতরাং আমরা পারস্পরিক রেষারেষি, অবিশ্বাস ও দলাদলির বদলে একতা ও ঐক্যের দৃষ্টান্ত কায়েম করব। একই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দল-মত নির্বিশেষে আমরা সবাই আগামীতে এক হয়ে কাজ করব। বিভাজন নয়, ঐক্য চাই। ফ্যাসিবাদ বিলোপে ঐক্য চাই।’
এর আগে একই দিন বিকালে একই পেজে দেওয়া একটি পোস্টে হ্যাশট্যাগ দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘স্টপ পলিটিক্যাল কন্সপিরেসি, উই আর অলরেডি শহীদ।’ অর্থাৎ, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। আমরা অলরেডি শহীদ।’
(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন