ক্যানসার প্রতিরোধ করে পানিফল, স্বাস্থ্যগুণ জানলে অবাক হবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১
অ- অ+

পানিতে জন্মে বলে পানিফল। শীতকালে বেশ জনপ্রিয় পানিফল। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই চীন দেশে পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়। স্থির বা ধীর প্রবাহমান স্রোতের পানিতে পানিফল জন্মে। ফল দেখতে অনেকটা সিঙ্গাড়ার মতো বলে সাতক্ষীরার লোকরা একে ডাকে সেঙ্গারা ফল নামে। এ দেশের আরও বেশ কিছু জায়গায় পানিফল সিঙ্গারা ফল নামেই পরিচিতি।

পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম ওয়াটার চেসনাট, উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম ট্রাপা বাইস্পাইনোসা, পরিবার- ওনাগ্রেসিয়া। নাম বাইস্পাইনোসা মানে দুইটি কাঁটা থেকেই বোঝা যায় যে ফলে দুইটি কাঁটা বর্ষজীবী জলজ ও গাছ। সাধারণত চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন, আফ্রিকা এসব দেশে পানিফল আবাদ হয়।

অনেকে পানিফলকে পানির বাদাম বলে কিন্তু আসলে বাদামের কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই এতে। এটি পুরোপুরিভাবে পানীয় ফল। কাঁচা অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া যায়। চীনে বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে সবজি রান্না করা হয়। চীনের খাদ্য তালিকায় পানিফল বেশ জনপ্রিয় এবং আবশ্যকীয়। চীনারা পানিফলকে শুকিয়ে আটা তৈরি করা হয়। সে আটা দিয়ে তারা পিঠা কেক বিস্কুট তৈরি করে খায়, বাজারে বিক্রি করে। কোথায় কোথায় পানিফল গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অতি পরিচিত পানিফলটি শুধু গ্রামেই নয় শহরের ফুটপাতের ফলের দোকানে স্থান করে নিয়েছে। তবে লাল ও কালচে সবুজ রঙের এ ফলটি এখনও শহরের বড় বড় ফলের দোকানে স্থান করে নিতে পারেনি অজ্ঞাত কারণে।

ময়লা কলুষিত পানি পরিশোধের ক্ষমতা রয়েছে পানিফল গাছের। সে কারণে অনেকে নোংরা স্বল্প গভীর জলাশয় যেখানে মাছ চাষ করা যায় না এমন পরিত্যক্ত জায়গায় পানিফলের গাছ লাগিয়ে পানি পরিষ্কার করে পরের বছর তাতে মাছের চাষ করেন। পানি ফলের আদি বাসস্থান সম্ভবত এ উপমহাদেশে। কেউ কেউ মনে করেন আদি নিবাস ভারতবর্ষ। উত্তর আমেরিকাতে ১৮৭৪ সালে পানিফল প্রবর্তন ও চাষ শুরু করা হয় বলে জানা গেছে। এ দেশের নিচু এলাকার জলাশয়গুলোতে জন্মে থাকে। বীজ থেকে পানি ফলের গাছ জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম ২ বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। পানিফলে সাধারণত তেমন কোনো রোগ পোকা দেখা যায় না। তবে কোনো কোনো সময় পানিবাহিত রোগ বা পাতা খাদক পোকা সমস্যা সৃষ্টি করে, আবাদ উৎপাদনের কিছুটা ক্ষতি করে। সে ক্ষেত্রে কৃষক কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেন এবং সমস্যা উতরিয়ে যান পানিফলকে বালাইয়ের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন।

পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। প্রায় ৯০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেড, ৬০ শতাংশ শর্করা আছে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ আঁশ, রাইবোফ্লেবিন, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আমিষ, ভিটামিন আছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় পানিফলে খাদ্য শক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও অনেক উপকার আছে। পানির ঘাটতি মেটাতে পানিফলের জুড়ি মেলা ভার। দামেও বেশ সস্তা। পানিফলের রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুণ, যা জানলে অবাক হবেন-

লিভার ভালো রাখে

লিভার হলো শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ। লিভার ভালো থাকলে শরীরের সব ক্রিয়াকলাপ স্বাভাবিক থাকবে। মৌসুমি যে ফলগুলো লিভার ভালো রাখতে সহায়তা করে, তার মধ্যে পানিফল অন্যতম। এই ফলে থাকা পানি লিভারে কোনো সংক্রমণ হতে দেয় না।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা কম নয়। পানিফল রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এই ফলে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপের মাত্রা বাড়তে দেয় না। সব সময়ে বিপদসীমার বাইরে রাখারই চেষ্টা করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নির্ভয়ে খেতে পারেন এই ফল। মিলবে দারুণ উপকার।

হজমের গোলমাল কমায়

শীতকালে বেশি বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা লেগেই থাকে। হজমসংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার চটজলদি সমাধান লুকিয়ে রয়েছে পানিফলে। শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পানিফল পানির ঘাটতি পূরণ করে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করা। হজমের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন খেতে পারেন পানিফল।

ওজন কমায়

পানিফলে থাকা স্বাস্থ্যকর কিছু উপাদান শরীরের যাবতীয় টক্সিন বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে মেদ জমার কোনো সুযোগ থাকে না। ওজনও থাকে হাতের মুঠোয়। এছাড়া এই ফলে থাকা পানি হজমের গোলমাল হতে দেয় না। পরিপাকক্রিয়া উন্নত করে। হজম ঠিক ঠাক হলে মোটা হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই।

অনিদ্রা দূর করে

সারা রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেও ঘুম আসতে চায় না। অনিদ্রা নিয়ে ভুগছেন অনেকেই। নানা ভাবে চেষ্টা করেও অনিদ্রার সমস্যা কিছুতেই যেতে চায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না পানিফল খেলে সহজেই ঘুম আসতে পারে। তাই এই শীতের রাত জেগে না কাটাতে চাইলে পানিফল খেতে পারেন। মিলবে উপকার।

পানিফল বলকারক ও যৌনশক্তিবর্ধক

পানিফল বলকারক ও যকৃতের প্রদাহনাশক। উদরাময় রোগে উপকারী। পানিফল বীর্য সৃষ্টিকারক, গাঢ়কারক এবং ধারক হিসেবে অধিক কার্যকরী। এটি যৌনশক্তিবর্ধক এবং ঋতু আধিক্যজনিত সমস্যায় উপকারী। পিত্তজনিত রোগনাশক এবং রক্ত দাস্ত বন্ধকারক। পানিফল প্রস্রাববর্ধক, শোথনাশক এবং রুচিবর্ধক। দীর্ঘকাল ধরে পানিফল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। শুকনো পানিফল, ছালের মিছরি, হলুদ তুদরি, মগজে পুম্বাদানা, তাবাশির, দারচিনি, রুমি মস্তগি, কুশতা কালাই একত্র করে পাউডার বা সেমিসলিড ফরমে তৈরি করা যাবে। তবে সেমিসলিড ফরমে তৈরিতে মধু ব্যবহার করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

কাঁচা পানিফলে প্রায় তিন ভাগ জল থাকে। প্রচুর রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান নিয়ে গঠিত এই সুস্বাদু ফল।

পোকার দংশনে

বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের দংশনের জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে তত্‍ক্ষণাত্‍ পানি ফল বেটে ওই জায়গার ওপর প্রলেপ দিলে তাড়াতাড়ি যন্ত্রণা মুক্তি হয়।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

অক্সিডেটিভ চাপ এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী হিসেবে কাজে আসে পানিফল।

(ঢাকাটাইমস/১৮ নভেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২১১ রানের লিড নিয়ে স্বপ্নের মতো একটি দিন কাটালো বাংলাদেশ
কোন সময়ে শীতে রোদ পোহালে শরীরে তৈরি হবে ভিটামিন ডি
এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা হবে বিকালে
এইচএসসি ও সমমানের ফরম পূরণ শুরু ২ মার্চ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা