পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাইব: প্রধান উপদেষ্টা
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে দেশটির কাছে ফেরত চাইবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার একশ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। তার এই ভাষণ বিটিভিসহ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
বক্তব্যের শুরুতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাইবো। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) গত ১৫ বছরে গুম, খুন, এবং বিভিন্ন অপকর্মের বিচার করবেন এবং গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।’
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। কঠিন এক পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকার-শূন্য হয় সাময়িকভাবে।’
‘পুলিশ প্রশাসন ও এসময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-অগাস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
জুলাই-আগস্টের বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদি মৃত্যু হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯ হাজার ৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই তালিকায় আরো নতুন নতুন শহিদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইবো।’
‘কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করবো। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছে। এই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, যতই শক্তিশালী হোক, অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এগিয়ে চলছে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই হিসাবে অন্তবর্তী সরকার একশ দিন পার করেছে।
এর আগে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সেদিনই প্রথম দফায় জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। এর ১৭ দিন পর ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দ্বিতীয় দফায় ভাষণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। আর দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে তৃতীয় দফায় ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় উপদেষ্টা পরিষদের আকার আরেক দফা বাড়ানো হয়। গত ১০ নভেম্বর নতুন তিনজন উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ২৪ জন।
(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/ডিএম)
মন্তব্য করুন