ট্রায়াল ট্রেনের উদ্বোধনীতে প্রকল্প পরিচালক

যমুনা রেলসেতুতে ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল, উদ্বোধন জানুয়ারিতে

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫০| আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৪
অ- অ+

উত্তরবঙ্গের একমাত্র প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলওয়ে সেতুর মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়াল ট্রেন চলাচল করেছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে চলবে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ট্রায়াল ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। বুধবার পর্যন্ত চলবে ট্রায়াল ট্রেন।

রেল সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ট্রায়াল ট্রেনের শুরুতে ঘণ্টায় গতি ছিল ১০ কিলোমিটার, পরেবার ঘণ্টায় ট্রেনের গতি ছিল ২০ ৪০ কিলোমিটার।

এর আগে গতকাল সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে ট্রায়াল ট্রেন শুরু হয়। উদ্বোধনী ট্রায়াল ট্রেনটি ২০ মিনিটে পশ্চিম পাড়ে পৌঁছায় এবং ১০ মিনিটে ফিরে আসে। মাঝপথে পশ্চিম পাড় থেকে ছেড়ে আসা অপর ট্রায়াল ট্রেনটি ক্রসিং করে।

প্রথম ট্রায়াল ট্রেনটি পরিচালনা করেন মাইনুল ইসলাম, সহকারী চালক ছিলেন আব্দুস সালাম। মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম ট্রেনটি আমি চালাব। আমার ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

ট্রায়াল ট্রেন উদ্বোধন সময়ে ব্রিফিং করেন রেল সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফ্রান্সের মার্ক হবি, নির্মাণ ব্যবস্থাপক জাপানের মি. ইপোমাফসু, ট্রাক এক্সপার্ট জাপানের নাকাজিমা, নিরাপত্তা প্রকৌশলী কামরুল হাসান চৌধুরীসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উধ্বর্তনের কর্মকর্তারা।

এদিকে, ট্রায়াল ট্রেন ঘিরে টাঙ্গাইল সিরাজগঞ্জের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এখন যমুনা রেল সেতুটি উদ্বোধনের প্রহর গুনছেন তারা।

এদিকে, যমুনা বহুমুখী সেতুর পাশে (৩০০ মিটার দূরে) নির্মাণাধীন এই রেলসেতু চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। তবে, ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। উদ্বোধন হতেহ পারে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে। এরপর শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত সোমবার থেকে ট্রায়াল ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে আজ (২৬ নভেম্বর) সকালে উদ্বোধনী ট্রায়াল ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে, যা বুধবার পর্যন্ত চলবে। আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে সেতুটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের এই দীর্ঘতম রেলসেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে পারাপার হতে পারবে। আর সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বাঁচবে।

যমুনা রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন যমুনা রেলসেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছরে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতুর পূর্ব প্রান্তে নতুন রেলস্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন। সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেলস্টেশনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে সেতু নির্মাণ রঙ-তুলি ঘষামাজার কাজ প্রায় শেষ।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে হাজার ৭৩৪ কোটি লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরে এর মেয়াদ বছর বাড়ানো হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/মোআ

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নে জাইকার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
ছেলে সন্তানের বাবা হলেন মুস্তাফিজ
সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই
ফেনীতে কৃষকের মনে কষ্টের মেঘ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা