খোদা বকশ এবং আলী ইমাম মজুমদাররা গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন: রিজভী
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ খোদা বকশ চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, এখন নতুন কেউ কেউ উপদেষ্টা পরিষদে কিংবা প্রধান উপদেষ্টার কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাদের লক্ষ্যই যেন আন্দোলনের পক্ষে যারা ছিলেন বা সহানুভূতিশীল ছিলেন তাদের লক্ষ্যবস্তু করা।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরীর গত ১৫ বছর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিজভী। বলেন, ‘খোদা বকশ সাহেব পুলিশের সাবেক আইজি ছিলেন। কিন্তু গত সাড়ে ১৫ বছর তার কী ভূমিকা ছিল? তিনি কয়জনকে চেনেন? আমরা প্রতিমুহূর্তে নিপীড়িত হয়েছি। এই অফিস ভেঙে চার-পাঁচবার নিয়ে গেছে আমাদের। এখানে আমরা যারা বসে আছি, শেখ হাসিনার পতনের পরদিন জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছি। তার আগের দিন পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলাম।
‘এই যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিট, এটা কি ধারণ করেন খোদা বকশ সাহেবরা?’ এই প্রশ্ন তুলে রিজভী খোদা বকশের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি তো আইজি ছিলেন বিএনপির সময়। আপনাদের কারণেই তো ১/১১ এসেছিল, অগণতান্ত্রিক শক্তি এসেছিল।’
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের কোনো অবদান আছে কি না সেই প্রশ্ন তুলে বিএ্নপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করতে গিয়ে বেছে বেছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষের কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। পরে এটা পরিবর্তন করেন নানা দিক থেকে বিতর্কিত হয়ে।
‘কিন্তু উনি (আলী ইমাম) এই সাড়ে ১৫ বছরে কখনো কি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে একটি আর্টিকেল লিখেছেন? আমাদের সমর্থনে কি কখনো একটি কথা লিখেছিলেন অথবা জুলাই-আগস্টে তারা কি কোনো মতামত দিয়েছেন? কিন্তু তারা অন্তরের মধ্যে একটি মত ধারণ করেন, সেটার প্রতিফলন আমরা দেখেছি উনি উপদেষ্টা হওয়ার পরে।’ বলেন রিজভী।
প্রশাসনে যারা বঞ্চিত ছিলেন, যারা আন্দোলনের পক্ষে সহানুভূতিশীল ছিলেন, তাদের বিপক্ষে খোদা বকশ অবস্থান নিচ্ছেন- এমন শুনেছেন বলে জানান রিজভী। বলেন, ‘এটা খুবই রহস্যজনক ব্যাপার। টার্গেট করে তাদের (সহানুভূতিশীল) বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তাদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন জানি একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজের পছন্দকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা এই কাজগুলো করছেন।’
রিজভী খেদ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলখানার ভেতরে বসে সালমান এফ রহমান যে কারসাজি করছেন, তিনি যে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, এ ব্যাপারে তো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। কারাগারের ভেতরে থেকে সালমান এফ রহমান সব পরিকল্পনা করছেন, তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। গার্মেন্ট সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তোলার পেছনে নিশ্চয়ই তার অবদান আছে। এগুলোর ব্যাপারে তো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তারা কী করে ভেতর থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে?’
সরকারের মূল স্পিরিটের বাইরে কিছু কিছু উপদেষ্টার পদক্ষেপ তাদের ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা। বলেন, ‘এটা গোটা জাতিকে একটা শঙ্কার মধ্যে নিয়ে গেছে। এই কারণেই আজকে সালমান এফ রহমানদের মতো লোকেরা কারাগারের ভেতর থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’ যারা এখনো গ্রেফতার হননি তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিপুল অংকের টাকা ছিটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য অনেকেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। রিজভী বলেন, ‘স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী শাসনকালে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা উপদেষ্টা হয়েছেন তারা শারীরিকভাবেও নির্যাতিত হয়েছেন। আবার সরকারে কেউ কেউ এমনও আছেন যারা সব সময় সুবিধার অনুসন্ধান করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে যে এত অত্যাচার-অবিচার হলো, স্বয়ং দেশের জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হলো, আলী ইমাম মজুমদার কিংবা খোদা বকশ সাহেবের কোনো আর্টিকেল দেখিনি। এখন এসে একটি স্থিতিশীল সরকারের মধ্যে কে ভালো কে মন্দ উনারা নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে গণতন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
রিজভী সতর্ক করে বলেন, ‘আজকে কোনোভাবে যদি শেখ হাসিনার পুনরুত্থান ঘটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যদি দু-একজন ভেতরে ভেতরে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন, তারা ছাড়া এই সরকারের কেউ তো রেহাই পাবেন না। আমরা কেউ রেহাই পাব না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, মামুন হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন, রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/জেবি/মোআ)
মন্তব্য করুন