বইঃ আমার কথা
‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকান্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘ঢাকাটাইমস২৪ডটকম’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে ‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’
আমি সবসময় একটা কাজ করি, তা হচ্ছে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা। কেউ কেউ আমাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে কোনো কোনো বিষয়কে দেখার জন্য বললেও আমি সেটা দেখি না। আমাকে নিয়ে কত জন কত কথা বানিয়ে বানিয়ে নিজেদের মনের মতো করে লিখেছেন। এখন সবই মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এখন তো তাদের লজ্জায় মুখ দেখাতে পারার কথা নয়। অনেকে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন, আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করেছেন। সাময়িকভাবে কিছুটা সফলও হয়েছেন; তাহলেও তো আমার প্রকৃত ক্ষতি তাঁরা করতে পারেননি। অবশেষে এটাই প্রমাণিত হয়েছে এ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে যত কথা বলেছেন, বদনাম ছড়িয়েছেন, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁরা আমার ক্ষতি করলেও আমি কারও ক্ষতি করিনি। ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আসেননি। কারণ সমস্যা তো তাঁদের ভিতরেই। আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে তাঁদের অনেক গোপন কথাই ফাঁস হয়ে যেত। এই কারণে তাঁরা ভীত ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল কেবল একটা : আমাকে হেয় করা, সরকারকে বিব্রত করা এবং পদ্মা সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করা। এরও উদ্দেশ্য ছিল- আমার ইতিবাচক ভাবনায় তাঁদের ঈর্ষাপরায়নতা। আমি মামলা করতে পারতাম, তাও করিনি। কারণ আমি জানি, সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। এ কারণে আমি সবসময় সবকিছু ইতিবাচকভাবেই দেখি। আর এজন্য আমি ইতিবাচক কার্যকলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা বলে মনে করি।
‘নেতিবাচক লোক ব্লাড ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ। এটি যেমন ব্যক্তির জন্য সত্য তেমনি সত্য সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও। নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী ব্যক্তি আপনার মূল্যবোধকে অবমূল্যায়ন করবে, ভাবমূর্তিকে করে দেবে ধ্বংস।... সুতরাং সবসময় নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী লোক, সে যে-ই হোক না কেন, তার থেকে দূরে থাকুন ‘
আমাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সফলতা অর্জনের জন্য ইতিবাচক কার্যকলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমি মন-খোলার আগে মুখ খুলি না। অন্তরকে সবসময় শান্ত ও ধীরস্থির রাখার চেষ্টা করি, আমার আবেগ প্রকাশ করি- সে যেটাই হোক- হাসি দিয়ে। আবেগ যদি কৃত্রিম হয় তাহলে সেটি হয় মারাত্মক প্রতারণা। ইতঃপূর্বে, আমার লেখা ‘আমার জবাবদিহিতা’ শিরোনামের গ্রন্থে কিছু কিছু বিষয় নথিপত্রসহ তুলে ধরে আমার কর্মকান্ডের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেছি।
আমার বিশ্বাস, আমরা অন্তরে যা ধারণ করি, তা আমাদের সকল কাজে-কর্মে, শিক্ষাদীক্ষায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আমি আরও বিশ্বাস করি, ইতিবাচক শক্তি ও আশা-প্রত্যাশা, আমাদের চ্যালেঞ্জ বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। অত্যন্ত কঠিন ও জটিল কাজে সফল হতে হলে ইতিবাচক কার্যকলাপের বিকল্প নেই। আমি এ-ও বিশ্বাস করি, ইতিবাচক শক্তি বা কার্যকলাপ সংক্রামক ব্যাধির মতো। কেননা ইতিবাচক কার্যকলাপের সফলতা পরবর্তীকালে অন্যান্য কাজের ওপরও প্রভাব ফেলে। একইভাবে আমাদের নিজেদের ইতিবাচক কার্যকলাপ অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। এ প্রভাব ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুইভাবেই হতে পারে। ইতিবাচক চিন্তা করলে মানুষ বাঁচেও বেশিদিন। ইতিবাচক চিন্তা বা হাসি-খুশী মন মানুষকে বেশী দিন বাঁচিয়ে রাখে। ইতিবাচক ও হাসি-খুশী ভাব খোলা মনের ও ভালো হৃদয়ের পরিচায়ক। যে মন খুলে হাসতে পারে না, ইতিবাচক চিন্তা করতে পারে না- সে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি। হাসি-খুশী মন ও ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী মানুষ সুস্থ থাকে বেশি। নেতিবাচকতা অসুস্থতার নামান্তর। অসুস্থ ও নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
নেতিবাচক লোক ব্লাড ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ। এটি যেমন ব্যক্তির জন্য সত্য তেমনি সত্য সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও। নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী ব্যক্তি আপনার মূল্যবোধকে অবমূল্যায়ন করবে, ভাবমূর্তিকে করে দেবে ধ্বংস, আপনাকে উন্মাদের মতো পরিচালিত হতে ইন্ধন যোগাবে, নষ্ট করে দেবে আপনার স্বপ্ন, ভেঙে দেবে সৃজনশীলতাকে, উৎসাহকে করবে বাধাগ্রস্ত, সামর্থকে করে দেবে দুর্বল এবং আপনার মূল্যবান মতামতকে উপহাস করে উড়িয়ে দেবে; এ অবস্থায় আপনার মনোভাবে নেমে আসবে হতাশার কালো মেঘ। সুতরাং সবসময় নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী লোক, সে যে-ই হোক না কেন, তার থেকে দূরে থাকুন। নেতিবাচক লোক বা অসৎ লোক সৎ ব্যক্তির কাজের মধ্যে, ইতিবাচক লোকের কাজের মধ্যে কখনো মহৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না। সে সব সময় কাজের নেতিবাচক দিক, কাজের অসৎ উদ্দেশ্য ও অসৎ কর্ম দেখতে পায়।
এ সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নেতিবাচক চিন্তা করে। তারা কাজও করে অনেক খারাপ, অনেক ভয়ঙ্কর। সেটার কুফল সে একা ভোগ করে এমন নয়, পুরো পরিবারকে বহন করতে হয়, এমনকি জাতিকেও। আমার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে, রাজনীতিক জীবনে অনেক সহকর্মী ও বন্ধুদের দেখেছি যাঁরা নেতিবাচক ধারণার কারণে নেতিবাচক কার্যকলাপে জড়িত হতেন। ওটাতেই তাঁদের আনন্দ। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাঁদের ফেরাতে। কিন্তু আমি তাঁদের বদলাতে পারিনি। কারণ, তাঁরা কোনোকিছুকেই ইতিবাচকভাবে মেনে নিতে পারেন না। এ কারণে সবকিছুই মনে করেন কঠিন। ইতিবাচক ও সৃষ্টিশীল কোনো কাজ যখনই তাঁদের সামনে উত্থাপন করেছি, তখন তাঁরা বলতেন, এটা অসম্ভব ও জটিল একটি কাজ। তাই কাজ করা হতে বিরত থাকতেন, অধিকন্তু নেতিবাচক ধারণার ফলে অন্যকেও সহায়তা করতেন না।
আবার যখনই আমি কোনো কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতাম, তখনই তাঁরা শুধু একটি কথাই বলতেন, এটা করার মতো নয়। এমনকি যদি আমি তাঁদের বলি, সূর্যটি জ্বলজ্বল করছে, তখনও তাঁরা বলত, কই, আমরা তো দেখছি না। তখন আমি তাঁদের বলতাম : বের হয়ে গিয়ে সূর্যের আলো দেখে আসতে। তখন তাঁরা কী উত্তর দিতেন, জানেন? তাঁদের উত্তর মুখস্থ : আমাদের এখন বাইরে যাওয়ার সময় নেই। আমরা খুবই ব্যস্ত এবং খুবই ক্লান্ত। আসলে এটা তাঁদের নেতিবাচক ধারণার প্রতিক্রিয়া, যা তাঁদের ইচ্ছাশক্তিকেও হ্রাস করে দিয়েছে। তাই তাঁদের জানারও আগ্রহ কম। সৃষ্টির আগ্রহ তো ছিলই না। এরকম অনেক মানুষ আছে। আমি দেখেছি, প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে ‘অসম্ভব’ এসে বাধার সৃষ্টি করে। যারা মূর্খ, যারা অলস- তারা কিছু করবেনা বলে ‘অসম্ভব’ শব্দটি সামনে নিয়ে আসে। এ পৃথিবীতে মানুষের ‘অসম্ভব’ বলে কিছু নেই, থাকতে পারেনা। আমি আমার জীবন থেকে ‘অসম্ভব’ শব্দটি বাদ দিয়েছি- জীবনে সফলতা অর্জন করেছি।
‘ইতিবাচকতা সফলতার মেরুদন্ড। ইতিবাচক মনমানসিকতার লোক খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে যত বাধাই আসুক না কেন, কেউ তাদের দমাতে পারে না। সেটা যত কষ্টই হোক ইতিবাচক শক্তি তাকে ঠিক যথাসময়ে গন্তব্য স্থানে নিয়ে যায়।’
আমার সঙ্গে এ জীবনে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের যেমন দেখা হয়েছে, তেমনি গুটিকয়েক নৈরাশ্যবাদী ও নেতিবাচক মনমানসিকতার লোকজনের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। এর মধ্যে অনেককেই আমি অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি, তাঁরা এখন আগের থেকে অনেক উদ্যমী, আশাবাদী এবং ইতিবাচক ধারণার অধিকারী লোক হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। কালকিনি-মাদারীপুর সংসদীয় এলাকায় আমার প্রতিষ্ঠিত সাতটি কলেজে ছেলেমেয়েরা পড়ছে। এর মধ্যে কত রকম শিক্ষার্থী আছে, কত ভিন্ন তাদের মানসিকতা- তার ইয়ত্তা নেই। তাদেরও আমি ঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। অনেকেই এমন হয়েছে যেটা আমার কল্পনারও বাইরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো জায়গায় বিসিএস-এর টপ র্যাঙ্কিঙে থাকা কর্মকর্তাও আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষকতা করছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত। সেটা কি আমার জন্য কম পাওয়া!
এখন যারা তৈরি হচ্ছে তারা আগামীদিনে আরও বড় বড় পদে চলে যাবে। এটাই আমার শান্তি। এ কলেজগুলো করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকে বিরোধিতা করেছে। তবু আমি হতাশ হইনি, হতাশা আমাকে ভয় পায়। সাফল্য আনার জন্য চেষ্টারও কমতি ছিল না। অনেক বাধাও ছিল, তবে ইতিবাচক ধারণার জন্য আমি সফল হয়েছি। ইতিবাচকতা সফলতার মেরুদন্ড। ইতোমধ্যে আমার প্রতিষ্ঠিত ‘শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ যোগ্যতা বিবেচনায় সরকার জাতীয়করণ করেছে।
এটা তো গেল একটা প্রসঙ্গ। আমার পেশাগত জীবনে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে জীবনে যখন যেখানে থেকেছি সেখানে, সে কাজে, নিজেকে আন্তরিকভাবে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি। জীবনের লক্ষ্য একটাই- যত বাধাই আসুক না কেন এগিয়ে যেতে হবে। একটা জীবন বহমান পানির মতো। বহমান পানির প্রবাহকে পাথরে আটকে রাখা যায় না। এটাকে অবশ্যই হয় বামে নাহয় ডানে যেতেই হবে। সে তার পথ তৈরি করে নেবেই নেবে। এটাই তার চরিত্র ও ধর্ম। পানির প্রবল স্রোতকে কখনও আটকানো যাবে না। ঠিক তেমনিভাবে আমিও এগিয়ে গিয়েছি। কথায় বলে, ইতিবাচক মনমানসিকতার লোক খুবই আত্মবিশ্বাস হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে যত বাধাই আসুক না কেন, কেউ তাদের দমাতে পারে না। সেটা যত কষ্টই হোক ইতিবাচক শক্তি তাকে ঠিক যথাসময়ে গন্তব্য স্থানে নিয়ে যায়।
আমি নিজে ইতিবাচক চিন্তায় বিশ্বাস করি। আমার কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরামর্শ দিই ইতিবাচক চিন্তাধারায় নিজেকে সর্বক্ষণ সমুন্নত রাখতে। তাদেরকে নিজের ক্ষমতার ওপর প্রচন্ড বিশ্বাস ও উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে দিনের কাজ শুরু করতে হবে। সেটা হলে তা প্রতিফলিত হবে তাদের চেহারায়, হাসিতে, মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময়ে এবং প্রতিদিন যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোতে। এসব বিষয় মোকাবিলায় ব্যক্তির ইতিবাচক মানসিকতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আপনি কি দেখেননি- সবসময় দেখা যায় একজন প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী মানুষের ভাবভঙ্গিই হয় অন্যরকম। তাঁর চেহারা, হাসি, শারীরিক ভাষা ও কর্মস্পৃহাই বলে দেয় তাঁর সফলতার কথা। আত্মবিশ্বাস তার সর্বক্ষণের সঙ্গী। এর বিপরীত দিকে একজন নেতিবাচক চিন্তাধারার মানুষ নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখে। প্রকাশ করতে চায় না। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে না। মোকাবিলা করা তো দূরের কথা, কাজ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজ থেকে দূরে থাকতে পারলেই যেন তার জয়। এ কারণে সাফল্য আসে না। সঙ্গতকারণে আত্মবিশ্বাসহীন ও নেতিবাচক মননশীলতার অধিকারী মানুষ জীবন থেকে ভালো কোনোকিছু আশা করতে পারে না। যতদিন বেঁচে থাকে হতাশার মধ্যে থাকে, অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়। কিন্তু নিজের ব্যর্থতা দেখে ও শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের স্বপ্ন দেখতে পারে না। তাদের জীবনে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। আছে কেবল পরাজয়ের গ্লানি। চ্যালেঞ্জহীন জীবন ঢেউহীন নদীর মতো নিথর।
একজন মানুষকে আশাবাদী করে তোলে তার ইতিবাচক কার্যকলাপ। ইসলাম ধর্মেও এই কথা বলা আছে: যদি আপনি আশাবাদী হন, তাহলে যা আশা বা অনুসন্ধান করছেন তা খুঁজে পাবেনই পাবেন। পৃথিবীকে যদি আপনি সমস্যাসঙ্কুল, দুর্ভাগ্যময় এবং অমঙ্গলময় হিসাবে দেখেন, তাহলে সেভাবেই আপনার চোখে পৃথিবীটা চিত্রায়িত হবে। অন্যদিকে, যদি আপনি ভাবেন পৃথিবীটা খুবই সুন্দর, এখানে অনেক কিছু করার আছে, সুখ-শান্তি ও আনন্দ আছে, আছে স্বস্তি ও সফলতায় ভরা অবিরাম মাধুরী, তাহলে আপনার পৃথিবী আপনার কাছে সেভাবেই, সুন্দরভাবে ধরা দেবে। পৃথিবীর সবকিছু ভালো আপনাকে সালাম জানাবে। আপনার চিন্তা-চেতনা, চরিত্র এবং কল্পনায় যা ভেবেছেন, এগুলো সৃষ্টি করবে আপনার বাস্তবজগৎ এবং একই সঙ্গে মনোজগৎ। সুতরাং আপনি যেভাবেই চান সেভাবেই আপনার জীবন পরিচালিত হবে। হয় আপনাকে ইতিবাচক চিন্তা-চেতনায়, নাহয় নেতিবাচক কার্যকলাপে বেঁচে থাকতে হবে। এই কারণে অনেকেই নিজের জীবনের পথটা ইতিবাচকভাবেই প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তবে সেখানে ইচ্ছেশক্তি প্রবল না-থাকায় কখনও কখনও তার ছেদ ঘটে। এজন্য ইতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক প্রচেষ্টাও আবশ্যক।
ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্ম যেকোনো মানুষের জীবনের খারাপ ও জটিল সময়কে ক্ষণিকের মধ্যে সুন্দর মুহূর্তে পরিণত করে। পীড়াদায়ক ও কষ্টকর কাজটাকে বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলে। কথায় আছে, অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কোনো কিছু নেই। আমিও তা বিশ্বাস করি, ধারণ করি এবং লালন করি। তাই এটা মনে রাখতে হবে, ইতিবাচক কার্যকলাপ আপনাকে দেবে একটা সুন্দর ও গঠনমূলক জীবন। সফল হতে প্রেরণা দেবে। মনে আনবে উচ্চাকাক্সক্ষা এবং বাতলে দেবে সঠিক পথ।
আমাকে নিয়ে কারও কারও মনে সংশয় থাকলেও এখন সেটা থাকার কথা নয়। তারপরও, থাকলে বলব: এখনই সেটা কাটিয়ে নিতে। সবার কাছে আমার একটি অনুরোধ ও পরামর্শ : ইতিবাচক শক্তি ও কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজেকে শাণিত করুন। অন্যের ক্ষতি করা বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা নেতিবাচক মনোভাবের লক্ষণ। এটা হতে দূরে থাকুন। দলের বা কর্মীবাহিনীর মনোবল বাড়াতে ইতিবাচক শক্তিকে ব্যবহার করুন। দলের নেতা ইতিবাচক শক্তিতে বলীয়ান হলে, তা পুরো দলের ওপর প্রভাব ফেলে এবং দলকে করে তোলে আত্মবিশ্বাসী, কার্যকর, সৃজনশীল ও শক্তিশালী। এসব গুণাবলি থাকলে একটি দলের সাফল্য অনিবার্য। কোনো বাধাই তাকে পানির স্রোতের মতো আটকে রাখতে পারবে না। প্রকৃতির মতো অজেয় শক্তিতে সে নিজের জায়গা করে নেবেই।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি মনে করি এবং সবারই এটা মনে করা উচিত যে, নিরাশা ও হতাশা দিয়ে নিজের, পরিবারের, সমাজের ও দলের মনোবল ভেঙে না-দেওয়া। তাহলেই বিপদ হবে। একটা বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে- সামরিক বাহিনীর সফলতা শুধু অস্ত্র ও গোলাবারুদের ওপর নির্ভর করে না। তাদের ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা ও শক্তিশালী মনোবল হতে পারে বিজয়ের চাবিকাঠি। এ কারণে তারা বড় বড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নেয়। অন্যদিকে, মনোবলে সামান্য চিড় ধরলেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। লড়াই না করে অল্পতেই পরাজয়বরণ করে নিতে হতে পারে। মনে হতে পারে যে, এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ উচ্চ মনোবল বা প্রাণশক্তিতে বলীয়ান লোকজন তাদের নেতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়। তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য সাধিত হয়। পাশাপাশি তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় না। অন্যদিকে ক্ষীণ মনোবলসম্পন্ন দুর্বল নীতিহীন ব্যক্তিরা ব্যর্থ ও পরাজিত হয়। পরাজয়ের পর নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চায়। এজন্য তাদের নেতাদের ওপর সকল দোষ-ত্রুটি বিনাদ্বিধায় চাপিয়ে দেয়। এটা করতে তারা একটুও কার্পণ্য করে না।
‘একজন মানুষের ইতিবাচক শক্তি তার জীবনকে করে তোলে সুন্দর ও অর্থবহ এবং সফলতা লাভের জন্য করে উচ্চাকাক্সক্ষী, উৎসাহী এবং আত্মনিভর্রশীল। সেটা হলেই সফলতা আসবে নিশ্চিত।’
মানুষকে আন্দোলনের মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা উচিত। যা হওয়ার তাই হবে এটি যেমন সত্য, যা ঘটবে তা মেনে নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসা যায়- এটাও সত্য। বাস্তবতা বিবেচনা করে কর্মিবাহিনীকে আশাবাদী ও ইতিবাচক শক্তিতে গড়ে তুলতে হবে, তাহলে তারা হবে সৃজনশীল এবং মহৎ গুণাবলিসম্পন্ন। আশাবাদী মানুষের মন উদার হয়, দৃঢ়চেতা হয়। সেটাই হবে মানুষের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
আমি সবসময় হাসিমুখে থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি। কারণ আমি কারও অশান্তি কামনা করি না। আমার শত্রু হোক- সবার কল্যাণ চাই। আমি মনে করি, আমার চারপাশে যারা আছেন, তারা পরিবেশের অংশ হিসাবে আমারও অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি মনে করি, “পৃথিবীতে শত্রু-মিত্র কেহ কারো নয়, ব্যবহারে শত্রু-মিত্র সবাকার হয়”। তাই চারপাশের লোকদের অশান্তিতে রেখে আমার প্রকৃত শান্তি কখনও সম্ভব নয়। এজন্য যারা আমার অশান্তি কামনা করে, আমাকে কষ্ট দেয় কিংবা দিয়েছিল- তাদের সবার শুভ কামনা করি। এটাই আমার শান্তির উৎস।
আগামীকাল কাল থাকছে - ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ আরও পড়ুন - ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’, 'আমার অনুভব'।
মন্তব্য করুন