বইঃ আমার কথা

`খেলাধুলা ও বাংলাদেশ'

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:৩৬

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকান্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’

খেলাধুলা যেমন আকর্ষণীয়, তেমন উত্তেজনাময় ও উদ্দীপক। খেলাধুলা একটি ব্যায়াম, এক ধরনের বিশেষ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার। কিন্তু এ যুদ্ধ নির্মল, পবিত্র, আরাম ও আনন্দদায়ক। খেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং জয়-পরাজয়ের সম্পর্ক যেমন নিবিড়, তেমনি গভীর। খেলার কথা উঠলে আমার একটা বিখ্যাত প্রবাদের কথা মনে পড়ে যায়- Winners never quit and quitters never win.৩৯ পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সময় পেলে প্রায়ই আমি খেলা দেখি। ইদানীং ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ছেলেরা খুব ভালো করছে ক্রিকেটে। এটি আমাদের উন্নয়নের একটি প্রমাণ। গত কয়েক বছর আমাদের ক্রিকেট টিম টেস্ট সিরিজে এত ভালো খেলেছে যে, সেটা দেখে ভালো লেগেছে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলা নিয়ে শুরু করা যাক। প্রথম কয়েক দিনের খেলা তো ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। কিন্তু পাঁচ দিনের শেষ দিনে যখন বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করল তখন বুকটা ভরে গেল গর্বে। আমাদের দেশের অনেক খেলোয়াড় ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিঙে নিজের অবস্থান অনেক দূর নিয়ে গেছে। এটা কম গৌরবের কথা নয়।

আমি একসময় হাডুডু ও ভলিবল খেলতাম। যে খেলাই হোক, খেলার মাঠের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা বিরাজ করত, তেমনি উত্তেজনা বিরাজ করত খেলোয়াড়ের মধ্যেও। অনেক সময় আমি এসব খেলায় নির্দেশক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছি। আমি খেলোয়াড়দের এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করতাম, যেন তারা প্রত্যেকে আমার সেনাবাহিনীর এক-একজন সৈনিক। একজন কমান্ডারের মাথায় রক্ত উঠে যায়, যখন তার সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে থাকে। শরীর প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং স্নায়ুচাপ বেড়ে যায়। তবে ভালো ফল পেতে হলে উত্তেজনাকে যথাসম্ভব প্রশমিত রেখে জয়ের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত থাকা উচিত।

এখন আমি ক্রিকেট খেলা দেখি। দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে উত্তেজনায় সিট থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়ি, যখন বিজয়সূচক উইকেটটি পড়ে যায় তখন শরীর শিউরে ওঠে। উত্তেজনায় টেবিলের উপর থাপ্পড় দিয়ে বসি। অনেক জোরে শব্দ হয়। আজকাল তেমন একটা বাইরে যাওয়া হয় না। কিন্তু খেলা দেখতে বেশ ভালোই লাগে। হাজার হাজার বাংলাদেশির মধ্যে নিজেকে একাকার করে দেওয়া এটাই জাতীয়তাবোধ, সহমর্মিতা এবং ঐক্যচেতনার উৎস। ছোটবেলায় হাডুডু ও ভলিবল খেলতে গিয়ে কত-না ব্যথা পেয়েছি। ওইসব ইনজুরি বা আঘাত মাঠে আমাকে ভোগাত। মাঠে খেলতে গিয়ে অনেক সময় ব্যথা পেয়েছি। তবে যখন জয়ী হতাম তখন জয়ের কারণে সেই ব্যথা ভুলে যেতাম। মন ভরে উঠত গভীর আনন্দে।

ক্রিকেটকে আমি অন্য সকল খেলার চেয়ে কুশলী, গুরুত্বপূর্ণ ও মেধাময় মনে করি। কারণ ক্রিকেট খেলায় প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কৃতিত্বের পৃথক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ফুটবল, হকি, ভলিবল, হাডুডু বা অন্যান্য দলগত খেলাসমূহে সবার কৃতিকে পেছনে ফেলে শুধু স্কোরারদের কৃতিত্বকে সামনে তুলে ধরা হয়। অন্যান্যদের কৃতি খুব একটা বিবেচনায় আসে না। কিন্তু ক্রিকেটে প্রতিটি খেলোয়াড়ের খতিয়ান লিপিবদ্ধ হয়। কৃতি-বিকৃতির কিছুই এখানে উপেক্ষিত হয় না। ক্রিকেট খেলার বিশ্লেষণে তাই ক্রিকেট-পরিসংখ্যান বিশ্বের ক্রিকেট-বোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি।৪০

২০০৭ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে সুপার-৮ পর্বে ওঠার পর বাংলাদেশ আরও ছয়টি ম্যাচ খেলেছিল। সেবার প্রথম পর্বের তিনটি ও পরে সুপার আট পর্বের ৬টি- সব মিলিয়ে ৯টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ওই ৯ ম্যাচে বাংলাদেশ মোট ১২৭২ রান সংগ্রহ করে, যা ছিল গড়ে ১৪১.৩৩ রান। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথম পর্বের খেলা শেষে বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করলেও বাংলাদেশ পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারেনি। সমান পয়েন্ট পেয়েও নিট রান রেটে এগিয়ে থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। সে বছর ছয় খেলায় বাংলাদেশ মোট রান করেছিল ১০১৭। যা ছিল গড়ে ১৬৯.৫০ রান।৪১

‘‘আমরা সফল হতে পারব যতক্ষণ ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। ভারতের মতো দলকে হারিয়ে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের পক্ষে কোনো জয় অসম্ভব নয়।”

২০০৭ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাটিঙে উন্নতি লাভ করেছে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ‘বিতর্কিত’ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচসহ বাংলাদেশ মোট ৬টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। প্রথম পর্বের অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের নির্ধারিত ব্রিজবেন-ম্যাচটি আবহাওয়ার কারণে পরিত্যক্ত হয়। ওই ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১৫৮৫ রান, যার গড় ২৬৪.০০ রান। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বকাপে পর পর দুই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা দুটো সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের শক্তি ও গৌরব বৃদ্ধি করেছে। রিয়াদের আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসমানের একটিও সেঞ্চুরি ছিল না। বিশ্বকাপে বিতর্কিত রানে বাংলাদেশকে হারালেও এর মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফরে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুনে ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতকে পর পর দুই খেলায় হারিয়ে সিরিজ জিতে নেয়। এর আগে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচে উভয় দলের খেলা ড্র হয়।৪২

এখন ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেট অনেক বেশি জনপ্রিয়। তা হলেও ফুটবলের যে আনন্দ একসময়ে ছিল সেটাকে ফিরিয়ে আনাটাও প্রয়োজন। ক্রিকেটের ভিড়ে ফুটবল হারিয়ে যাবে বিষয়টা এমন যেন না হয়। আমি আরও বলতে চাই, বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয় বা অন্য কোনো টুর্নামেন্টে জয়ে আমাদের আনন্দ ও আত্মবিশ^াস নবায়ন হয় এবং সকলে একত্রে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠি। বিজয় আমাদের এ নির্দেশ দেয় যে, টিম-স্পিরিটের বিকল্প কিছু নেই। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা সফল হতে পারব যতক্ষণ ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। ভারতের মতো দলকে হারিয়ে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের পক্ষে কোনো জয় অসম্ভব নয়।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আমাদের ক্রিকেট দলের কৃতিত্ব সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এটি আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আর খেলোয়াড়দের সক্ষমতার গৌরবজনক নিয়ামক। এটি জানিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশ বিশ্বমানের দক্ষ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। ক্রিকেটে এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছি। ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন মাসে ক্রিকেটে ভারতকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। একই বছর জুলাই মাসে আমরা ওয়ানডে-সিরিজে আফ্রিকাকেও হারিয়েছি। ক্রিকেট খেলার বিজয় আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রতিভূ।

‘‘ক্রিকেট খেলার বিজয় আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রতিভূ। ক্রিকেট দলের মতো আমাদের জাতিও আজ ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কেউ হারাতে পারে না। এর অপরিসীম ক্ষমতার কাছে সবাইকে হার মানতে হয়।”

ক্রিকেট দলের মতো আমাদের জাতিও আজ ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কেউ হারাতে পারে না। এর অপরিসীম ক্ষমতার কাছে সবাইকে হার মানতে হয়। প্রশ্ন আসতে পারে, ক্ষমতা কী? ক্ষমতার বহু সংজ্ঞা আছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ক্ষমতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নানাজন নানাভাবে নানা উপায়ে ক্ষমতার অধিকারী হন। ক্ষমতা অন্যদের দলিত করার জন্য নয়। যে ক্ষমতা অন্যকে দলিত করে সেটি নৃশংসতা এবং পাশব। কোনো আদর্শ মানুষ ক্ষমতা দিয়ে অন্যকে দলিত করতে পারে না। আমি মনে করি- Power is the ability to do good things for others.৪৩ যারা ক্ষমতাকে সুসংহতরূপে ব্যবহার করতে পারে না, তারা সন্ত্রাসী।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অসামান্য দক্ষতা ও কৃতিত্ব আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং সেরা হতে অনুপ্রাণিত করবে। আমি আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাই ভালো খেলার জন্য, ভালো খেলে সম্মানজনক বিজয় অর্জনের জন্য। তারা তাদের সাফল্য ধরে রাখবে। আগামীদিনে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সাফল্য তারা এনে দেবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।

আগামীকাল কাল থাকছে - 'ধৈর্য পরীক্ষা’' আরও পড়ুন - ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :