বইঃ আমার কথা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘ঢাকাটাইমস২৪ডটকম’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব’
আমি মনে করি, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তার ক্ষমতায় আসার দিনটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসাবে পালন করা প্রয়োজন। আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তেমনভাবে পালন করা হয় না। অথচ অনেক দেশেই তা হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকার গঠনের দিনটি দেশের মানুষ পালন করবে। তবে এ দিনটিতে শুভেচ্ছা-স্মারক প্রকাশ করা যেতে পারে। গণমাধ্যমগুলো বিশেষ অভিবাদনপত্র প্রকাশ করতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রাস্তাঘাট নতুন সাজে সজ্জিত করা যেতে পারে। সেসঙ্গে এটা করার পেছনে একটি কারণ থাকবে, তা হলো বিগত বছরগুলোর অর্জনসমূহ পর্যালোচনা করা হবে। সরকারকে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। জনগণের অনুভূতিকে সমাদৃত করে প্রত্যেক বছর সেই একটি দিন তাদের জন্য উৎসর্গ করবেন সরকার-প্রধান। ওই দিন তিনি তাদের সঙ্গে কাটাবেন। আর দেশের ও সমাজের যেসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার সেসব বিষয়ে পরিবর্তনের চিন্তা করে পরবর্তী বছরের আরও কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। গণমাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
আমাদের দেশ ও দেশের জনগণকে আমি ভালবাসি। দেশের মানুষের সেবা করতে এবং তাদের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আমার সত্যিকার ইচ্ছা সম্পর্কে আল্লাহ্ ভালো জানেন। আমার প্রতি আমার বন্ধুদের অনুভূতি এবং আমার কাজের প্রতি তাদের উপলব্ধিÑ আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম- শিক্ষিত একটি সমাজ গড়ে তুলব। তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করব। মাঝে মাঝে ছাত্র-ছাত্রী ও জনগণের সঙ্গে সময় কাটাব। আমি আমার জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আমার এলাকার ছেলেমেয়েরা এখন নিজের বাড়িতে থেকে আমার গড়া প্রতিষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় করতে হচ্ছে না।
আমি এতিমদের সঙ্গে দেখা করি। আমি অসহায়, দুঃস্থ ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে থাকি। কারণ তারা আমাদের কারও-না-কারও সন্তান, গোটা বাংলাদেশের সকল মানুষের সন্তান। এ কারণে তাদের দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে। আমি আশা করি, আমার এই বইটি প্রকাশের পর আমার এই আহ্বানে সমাজ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে। দুঃস্থ, অসহায়, দরিদ্র ও এতিমদের জীবন-মান উন্নয়নে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। এখনও অনেকেই দিচ্ছে। আশা করি, তা আরও বাড়বে।
আমি আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা এ ধরনের, তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করি। কারণ আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা পড়ার সুযোগ পাবে। সেসঙ্গে এরকম সুযোগ পেয়ে সমাজে তারা নিজেদের শক্তি ও ধৈর্যের উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। তাদের কর্ম হতে উপকৃত হবে দেশ, জাতি ও সমাজ। মূলত এটাই হবে আমার সফলতা।
আমার একটা পরিকল্পনা আছে, এটি যেমন সুদূরপ্রসারী তেমনি কার্যকর। যারা আমার কলেজ থেকে পাস করে গেছে, ভালো অবস্থায় আছে, দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে- তাদের মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধন্যবাদসূচক একটি সার্টিফিকেট দেব। ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন এ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক সার্টিফিকেটটি তাদের মাকে উপহার দেয়। একসময় ওই সার্টিফিকেটটি তাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে। তেমনি অনুপ্রাণিত করবে তার অনুজদের।
গৃহকর্মী, রাস্তা পরিষ্কারকারী, নির্মাণ-শ্রমিক, গণপরিবহনের চালক এবং এরকম আরও অনেকেই আছে যারা প্রতিদিন আমাদের জীবনকে সহজতর ও আরামপ্রদ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ সময় তাদের এ অবদান সম্পূর্ণরূপে ঊহ্য থাকে। মাঝে মাঝে সরকারের ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যখন অনুষ্ঠান হয়- এ প্রচারাভিযানে হাজার হাজার শ্রমিক আসে। তাদের সম্মানিত করা প্রয়োজন, মূল্যায়ন করা আবশ্যক। তাহলে তারা আনন্দিত ও খুবই খুশি হবে। এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে শ্রমিকদের বোঝাতে হবে যে, আমরা তাদের কাজের মূল্যায়ন করি। তারা সাধারণ কেউ নয়, দেশের নির্মাতা এবং তাদের কাজের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবেই তারা আরও বেশি করে কাজ করবে।
সুখ লাভের প্রথম পন্থা হচ্ছে অন্যের অন্তরে সুখ স্থাপন। একটা মানুষ যখন অন্য আরেকজনের দ্বারা উপকৃত হয়, সুখী হয়, তখন বুঝতে হয়- তার জন্ম সার্থক। এ কারণে যে, সে মানুষকে খুশি ও সুখী করতে পেরেছে। এটা সবাই পারে না।সমাজের সর্বস্তরে জাতীয় এ উদ্যাপন পৌঁছে দেওয়ার অভিজ্ঞতা বড় ধরনের সাফল্যে পরিণত হতে পারে। কেবল দেয়ালে একটি ছবি ঝুলিয়ে বা পত্রিকায় অভিবাদনপত্র ছাপালেই কাক্সিক্ষত ফল বা সুখ পাওয়া যাবে না- এমনটি প্রত্যাশা করাও উচিত নয়। বরং মায়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে বা দুঃস্থ, অসহায়, দরিদ্র ও এতিমদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে অথবা সমাজের সর্বস্তরের শ্রমিকদের কাজের মূল্যায়ন করে বা কৃতজ্ঞতা জানানোর মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ পাওয়া সম্ভব। আমি মনে করি, সুখ লাভের প্রথম পন্থা হচ্ছে অন্যের অন্তরে সুখ স্থাপন। যাঁরা অন্যের অন্তরে সুখ স্থাপনের চেষ্টায় রত থাকেন- বিনিময়ে তাদের নিেেজদের সুখ তখনই অনিবার্য হয়ে যায়। আমাদের অন্যকে সুখ প্রদানের ব্যবস্থা করে নিজের সুখ নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
আগামীকাল কাল থাকছে - “বাংলাদেশের সফলতা”
আরও পড়ুন - সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’, 'আমার অনুভব'।
মন্তব্য করুন