বইঃ আমার কথা

ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:০৩ | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৪৭

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ’

সারাবিশ্বের বড় বড় কোম্পানির প্রায় দুইশতাধিক নির্বাহী চীনের একটি কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় আমি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তাঁরা আমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন আমি আমার বক্তব্যে বলেছিলাম, আমি যে কাহিনি বলতে চাই, সংক্ষেপে বলতে গেলে, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আমরা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে পেয়ে থাকি।

ব্যবসা হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি ভীষণ যুদ্ধক্ষেত্র। এটি কখনও ভয়ঙ্কর কখনও-বা আনন্দে ভরপুর উত্তেজনাক্ষেত্র, ঠিক খেলার মতো। আনন্দের হলে তা হয় সর্বজনীন আর ভয়ঙ্কর হলে হয় পাশব। যখন কেউ জয়ের জন্য মানবিক মূল্যবোধগুলোকে বিসর্জন দেয়, তখন প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর আর যখন তা সর্বজনীন কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকে তখন তা হয়ে ওঠে আনন্দ আর উত্তেজনার বিহ্বল ক্ষেত্র। সুন্দর প্রতিযোগিতা দক্ষতা অর্জন ও সুকুমারবৃত্তি প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, পক্ষান্তরে অসুন্দর প্রতিযোগিতা মানুষকে মানবীয় গুণাবলি হতে দূরে সরিয়ে অসুরে পরিণত করে।

“এটা সবার মনে রাখতে হবে যে, প্রতিযোগিতা আপনাকে করবে শক্তিশালী ও সেরা। দুর্বলরা প্রতিযোগিতাকে ভয় পায়। তারা কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় না এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখে।”

আমি সবসময় সমক্ষেত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাস করি, সংরক্ষণবাদে নই, যা আমাদের জন্য ভালো। যা সহজে অর্জন করা যায় তাতে কোনো আনন্দ নেই, তৃপ্তি নেই। এ কারণে যখন যে-ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছি তা প্রতিযোগিতা করেই পেয়েছি। প্রতিযোগিতা ছাড়া কেউ সফলতা পায় না, পেতে পারে না। প্রতিযোগিতাহীন অর্জন যতই প্রয়োজনীয় হোক না কেন, আলো-বাতাসের মতো কেউ তাকে নিয়ে ভাবে না। সবাই সফলতা চায়, কিন্তু পায় মাত্র গুটিকয়েক। তাই প্রতিযোগিতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। মূলত তারাই সফল হয় যারা প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। প্রতিযোগিতা ছাড়া অর্জিত সফলতা ভিক্ষার মতো লজ্জাকর এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের ন্যায় গৌরবহীন প্রাত্যহিক বিষয় মাত্র। আমি যা অর্জন করেছি- তা প্রতিযোগিতা করেই অর্জন করেছি। তাই আমার প্রতিটি প্রাপ্তি তা যতই ক্ষুদ্র বা বৃহৎ হোক না কেন, আমার আনন্দ, গৌরব আর অহঙ্কারের প্রতীক। আমার দুই মেয়ে রুবাইয়াৎ ও ইফকাতকেও আমি এটি বলে থাকি। সেভাবেই গড়ে তুলেছি তাদের।

শিক্ষালাভের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রতিযোগিতা করা, যা আপনাকে সবসময় আরও শক্তিশালী ও আরও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে এবং আপনাকে করে তুলবে সেরাদের সেরা। দুর্বলেরা সবসময় প্রতিযোগিতাকে ভয় পায়। এজন্য আমাদের দেশ শ্রেষ্ঠ, কারণ প্রতিযোগিতা এখানে উন্মুক্ত। আমাদের কর্মকর্তারা আরও ভালো, কেননা তারা সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। আমাদের রাস্তাঘাট প্রাকৃতিক পরিচর্যা বিবেচনায় খুব খারাপ বলা যাবে না। আমরা এগুলোকে আমাদের বুদ্ধি ও কৌশল দিয়ে আরও ভালো করে তোলার চেষ্টায় রত। কেননা আমরা রাস্তাঘাটের অবকাঠামোর উন্নয়নে এগিয়ে যেতে চাই। এমনকি আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সেরাদের সেরা হয় যখন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়, যা প্রথম হতে সাহস জোগায়।

“সৃজনশীলতা এবং আইডিয়ায় দেশ ও দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন সাধন হয়। ভবিষ্যৎ তো তাদেরই জন্য, যারা নতুন নতুন আইডিয়া বা ধারণা সৃজন করতে সক্ষম। নতুন নতুন ধারণা বা আইডিয়াই পারবে নতুন কিছু তৈরি করতে। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে।”

কয়েক বছর আগের কথা। একটি ব্যবসায়ী দল আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে। তারা আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া একটি প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করে। আমি চেষ্টা করেছি- ওই প্রকল্প যারাই বাস্তবায়ন করুক না কেন তারা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আসবে। এ কারণে সবাই এসেছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক হওয়ার জন্য। কিন্তু আমি সবাইকে একটা কথাই বলেছি- কাজটা যারাই পাক সেটা স্বচ্ছভাবেই হবে, যোগ্যতার বাইরে কোনোকিছুই গণ্য হবে না। আমি কারও একক অনুরোধ রক্ষা করিনি। তা করিনি এজন্য যে, আমি ওই প্রতিযোগিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ এমন রাখলেই কেবল আমি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটাকে পাব। শ্রেষ্ঠ অবকাঠামো বিনির্মাণের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই।

প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কী হলো! যারা অংশগ্রহণকারী তারা আমাকে অনুরোধ জানাল। আমি বললাম- স্বচ্ছ হবে। আর দুর্নীতির অভিযোগ এলো আমার ওপর। এতবড় একটি প্রকল্প যা নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমি জানতাম যে, এ প্রকল্প ও যা নির্মাণ করছি, সেই পদ্মাসেতু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কিছু করে যাওয়া উচিত। বর্তমানে পদ্মা সেতু সারাবিশ্বের মানুষের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

এ আলোচনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন করে আমাদের নিজেদের গড়ে তোলা। লক্ষ্যহীন বা গন্তব্যহীন হলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলব। আমাদের অবশ্যই সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে। যেকোনো কাজের ও যেকোনো মানুষের জীবনে উদ্দেশ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেটা না থাকলে আগামী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করাও সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মের কথা বিবেচনা করেই এমনভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে যাতে করে আগামীতে একটি সুন্দর জাতি গঠন করা যায়- যারা সাফল্যের তরী বেয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।

আমরা বিশ্বাস করি, সৃজনশীলতা এবং আইডিয়া দেশ ও দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্মাণ করে। ভবিষ্যৎ তো তাদেরই জন্য, যারা নতুন নতুন আইডিয়া বা ধারণা সৃজন করতে সক্ষম। বর্তমানে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনমূলক অর্থনীতির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে স্থান করে নেওয়া। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রবল প্রতিযোগিতা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হব। আমরা নিশ্চিত চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছবই।

আগামীকাল কাল থাকছে - “সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ” আরও পড়ুন -‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :