মানিকগঞ্জে খাল নিয়ে পৌরসভার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ
মানিকগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী খালটি দূষণমুক্ত রাখতে পৌরসভা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। মাছ চাষ করার জন্য খালের দুই প্রান্তে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। এতে দুই পাড়ের বাসিন্দা ও পথচারীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে রোগ সংক্রমণের।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন জানান, খালটি পরিষ্কার রাখতে ও রক্ষা করতে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ চাষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শুধু শুকনো মৌসুমে মাছ চাষ প্রকল্প চলবে বলে জানান তিনি।
বছরের অর্ধেকের কম সময় এই খালে পানি প্রবাহ থাকে না উল্লেখ করে বেল্লাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যেটুকু সময় পানি প্রবাহ থাকে না সে সময় হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা খালের মধ্যে ফেলে নষ্ট করে ফেলে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনায় খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে হোটেল ও বাসাবাড়ির মালিকদের বারবার নোটিশ দিয়ে কোনো কাজ হয়নি।’
মানিকগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টাউন লেবেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গে সভা করে খালটি পরিবেশবান্ধব করার জন্য সেটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই লক্ষ্যে পৌরসভার নিজ অর্থায়নে খালের দুই প্রান্তে (আসাদ উকিলের বাড়ি থেকে বাজার ব্রিজ পর্যন্ত) এক হাজার ২০০ মিটার অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এরপর এই বাঁধের মাঝখানের বিভিন্ন স্থানে গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল) বসানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাছ চাষের জন্য খালের দুই প্রান্তে বাঁধ দেওয়া শেষ হয়েছে। এই বাঁধের মধ্যে গভীর নলকূপের পানি দেওয়া হয়েছে। বাজার ব্রিজ থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত বাঁধের পানি মোটামুটি পরিষ্কার। অন্যদিকে মহিলা কলেজ থেকে আসাদ উকিলের বাড়ি পর্যন্ত বাঁধের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পৌরসভার নিজস্ব প্রজেক্ট হলেও বাঁধের মধ্যে এখনো বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে মাছ চাষের জন্য খালের মধ্যে দেওয়া ডিপ-টিউবওয়েলের পানি আরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মাছ চাষের জন্য দীর্ঘদিন খালের মধ্যে পানি আটকে রাখার কারণে তা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি মনে করেন, মাছ চাষের এমন উদ্যোগ নেওয়ার আগে শহরের সব শ্রেণির মানুষের মতামত নেয়ার প্রয়োজন ছিল পৌর কর্তৃপক্ষের। তিনি দ্রুত খালের মধ্যে জমে থাকা পচা পানি অপসারণ করার দাবি জানান।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আলী আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কলেজে এসে এখান থেকে (ব্রিজের পশ্চিম পাশ) বসে চা খাই। কিন্তু গত প্রায় এক মাস ধরে খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় এখানে আর চা খাওয়া যায় না।’
মানিকগঞ্জ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কর্মী বিমল রায় এ ব্যপারে কোনো কথা না বলে দ্রুত এর বাস্তবায়ন দাবি করেন।
মানিকগঞ্জ টাউন লেবেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ ঢাকাটাইমসকে বলেন, মানিকগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ও টাউন লেবেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সব সদস্যর উপস্থিতিতে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত এই খালের সৌন্দর্য রক্ষা করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন, খালের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বর্তমান সমস্যা থাকবে না।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই প্রজেক্ট মাছ চাষ করতে করা হয়নি। এটা করা হয়েছে শহরের ঐতিহ্যবাহী খালটি পরিষ্কার রাখতে। তিনি বলেন, বছরের প্রায় সময় খালে পানি রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খাল পরিষ্কার রাখতে পৌরসভা এমন উদ্যোগ নিলেও খালের দুই পাশে অবস্থিত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা খালে ফেলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনা না ফেলতে হোটেল-রেস্তোরা ও বাসাবাড়ির মালিকদের একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। পৌর মেয়র বলেন, ‘আর নোটিশ নয়, পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/৪জানুয়ারি/মোআ)
মন্তব্য করুন