কোন যুক্তিতে, কার সিদ্ধান্তে ইনিংস ঘোষণা?

খন্দকার জামিল উদ্দিন
| আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৫ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২৮

ওয়েলিংটনে যেভাবে বাংলাদেশ হারলো তাতে আমি খুবই হতাশ। সঙ্গে মেজাজটাও খারাপ আমার। এই ম্যাচে হারার কথাই ছিল না। ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশ এ ম্যাচে হেরেছে। আমি ইনিংস ঘোষণাকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করছি। কোন যুক্তিতে, কেন ইনিংস ঘোষণা করা হলো! এটা কার সিদ্ধান্ত? আমি জানতে চাই।

ইনিংস ঘোষণা না করলে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারতে হয় না। কমপক্ষে ড্র করার সুযোগ ছিল। সাব্বির উইকেটে ছিলেন। দারুণ খেলছিলেন। আরো ৪০/৫০ রান যোগ গতে পারত। তখন ওভারও কমে যেত। ৫২ ওভারে নিউজিল্যান্ডের সামনে টার্গেট ছিল ২১৭। বাংলাদেশ আরো ৪০/৫০ মিনিট খেললে এবং ৪০/৫০ রান যোগ হলে নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়াতে পারত ৪০ ওভারে ২৬০/২৬৫। তখন জয় নয়, ড্রয়ের লক্ষ্য নিয়েই ব্যাট করত নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশ বোকার মতো ইনিংস ঘোষণা না করলে নিউজিল্যান্ড হেরেও যেতে পারত। কারণ ৫৯৫ রানের সঙ্গে আরো ৪০/৫০ রান যোগ হলে চাপ বেড়ে যেত কিউইদের উপর। তখন আরো কম রানে অলআউট হয়ে যেতে পারত তারা। আবারও আমার জিজ্ঞাসা-এমন অপরিপক্ক সিদ্ধান্তটা কার? কী হিসেব কষলেন তারা?

সুযোগ থাকার পরও কেন অলআউট না হওয়া পর্যন্ত ব্যাট করে গেল না বাংলাদেশ? আমরা কী অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে গেছি? আমাদের হাতে কী সেই বোলিং লাইন আছে, যারা ৩০০ রানে ওদেরকে অলআউট করে দিতে পারে? আপনার হাতে এমন তিন পেসার যার দুইজনই নতুন। আরেকজনের আছে দুই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। এই বোলিং নিয়ে আপনি কী নিউজিল্যান্ডকে ফলোঅনের স্বপ্ন দেখেছিলেন? আবার দ্বিতীয় ইনিংসে যে আপনারা অল্পতে গুটিয়ে যাবেন না সেই নিশ্চিয়তও বা কোথা থেকে পেলেন? অদ্ভূৎ সিদ্ধান্ত।

শ্রীলঙ্কা যখন ভালো করা শুরু করে তখন তারা প্রথম ইনিংস ঘোষণাই করতো না। ৬০০, ৭০০, ৮০০ রান পর্যন্ত তারা খেলে যেত। একবার ৯০০ রান করে ফেললো। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এর আগে আমরা ৬০০ রানের উপরে গিয়েও কিন্তু ইনিংস ঘোষণা করিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই হওয়া উচিৎ ছিল। আশা করি এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকবে টিম ম্যানেজমেন্ট।

ইনিংস ঘোষণার মতো বাজে সিদ্ধান্তের পরও বাংলাদেশ হারতো না যদি না মুশফিক ও ইমরুল ইনজুরিতে পড়তেন। মুশফিকের ইনজুরি বাংলাদেশের খুবই বড় ক্ষতি। একদিকে যেমন তার ক্যাপ্টেন্সি মিস করেছে দল। অন্যদিকে তার ব্যাটিং।

দুই ইনিংসেই তিনি অধিনায়কত্ব করতে পারেননি। কিন্তু পরিবর্তিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল খুবই বাজেভাবে দল পরিচালনা করেছেন। তার বাজে অধিনায়কত্বের সুযেগে ৫৩৯ রান তুলে ফেলে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে তো আমি ওর অধিনায়কত্বে পুরোপুরি হতাশ। ৫২ ওভারে ২১৭ রানের টার্গেট তাদের। এই অবস্থায় যেভাবে ফিল্ডিং সাজানো দরকার ছিল সেভাবে সাজাতে পারেননি তামিম।

তবে মুশফিকের ব্যাটিং খুব বেশি মিস করেছে দল। আঙুলের ব্যথা নিয়েও তিনি ভালো ব্যাটিং করছিলেন। তার ইনজুরি দলের জন্য কাল ডেকে আনে। মুশফিক থাকলে নিউজিল্যান্ডের ওভারও যেমন কমত তেমনি টার্গেটও বেড়ে যেত। ইমরুলের ইনজুরিটাও মূল্য দিতে হয় দলকে।

প্রথম ইনিংসে সাকিব ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তার দিকে তাকিয়ে ছিল দল। কিন্তু তিনি আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। বাংলাদেশ দলের টেলএন্ডারদের বড়ই করুণ অবস্থা। রাব্বী, শুভাশিষ, তাসকিনরা তো ব্যাটই ধরতে জানেন না। এমন টেলএন্ডার নিয়ে চলে না। ভয়াবহ অবস্থা। শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন।

আমাদের দরকার ইমরান, কপিল, বেয়ারস্টোদের মতো অলরাউন্ডার। বেয়ারস্টো- আদিল রশীদরা শেষদিকে নিয়মিত দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন। ইংল্যান্ড দলের আসল শক্তিটা এখানে। মাশরাফির মতোও যদি তাসকিনরা কিছু রান করতে পারতেন তাহলেও তো হতো। একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা।

খন্দকার জামিল উদ্দিন: সাবেক সিসিডিএম চেয়ারম্যান ও বিসিবি পরিচালক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :