জনবল সংকট, স্থবির হয়ে পড়ছে বেনাপোল বন্দর

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর)
| আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৭, ১১:৪৮ | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০১৭, ১০:৪৯

যশোর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে জনবল সংকটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় বেনাপোল কাস্টম হাউসে অর্ধেকেরও বেশি পদ রয়েছে শূন্য। ফলে জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর ও কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম। কমিশনার থেকে শুরু করে ৪র্থ শ্রেণির ৩২টি ক্যাটাগরিতে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৪১টি। আর কর্মরত আছেন ১৬৫ জন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কাজের পরিধি পূর্বের তুলনায় বেড়েছে চার গুণ। সেই অনুপাতে কাস্টম হাউসের লোকবল বৃদ্ধি পায়নি। বেশ কিছুদিন আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়ে ওঠেনি। এ ক্যাটাগরির ১৬৫ জন কর্মকর্তার মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে এ কাস্টম হাউসে। কিন্তু এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৭৭ জন। শূন্যপদ রয়েছে অতিরিক্ত কমিশনারের ২ জন, সহকারী কমিশনার ৮ জন, রাজস্ব কর্মকর্তা ৫ জন এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ৭৩ জন। ইতিমধ্যে ১০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা হলেও তারা এখনো কোনো দায়িত্ব পাননি। ফলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ফলে ব্যহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর বেনাপোলে পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস কমিশনারেট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু পরিধি অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ হয়নি। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চারশ থেকে পাচশ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। সব মিলিয়ে বছরে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে কাস্টমসের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি তারা একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।

বেনাপোল কাস্টম সংশ্লিষ্টরা জানান, এত বেশি জনবল ঘাটতির কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ পণ্যের শুল্কায়ন, মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যের পরীক্ষা, অভিযোগের শুনানি, বিরোধ নিষ্পত্তি, রাসায়নিক পরীক্ষা, লাইসেন্স, বন্ড, নিলামসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি কাস্টম হাউজের সেবা গ্রহণকারী স্টেকহোল্ডাররাও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সর্বাধিক সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার। ১২০টি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ২ জন মহিলাসহ ৩৭ জন। শূন্য রয়েছে ৮৩টি পদ। এডিশনাল কমিশনারদের দুইটি পদই শূন্য রয়েছে। প্রোগ্রামারের একটি পদই শূন্য। সহকারী কমিশনারের ১৩ পদের মধ্যে ৮টি শূন্য। আছে মাত্র ৫ জন। রাসায়নিক পরীক্ষক আছে একজন। রাজস্ব কর্মকর্তার ২৩ পদের মধ্যে আছেন ১৮ জন। একজন করে আইন কর্মকর্তা, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক, অডিটর ও সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

তৃতীয় শ্রেণির স্টাফের ১৫১ পদের বিপরীতে আছে ৭১ জন, বাকি ৮০টি পদ শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির ১৮ পদের বিপরীতে রয়েছে ৯ জন। ৯টি পদই খালি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, জনবল ঘাটতির কারণে পণ্য ছাড় করতে দেরি হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পণ্য পরীক্ষণ গ্রুপে লোকবল কম থাকায় সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডা. এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বন্দর সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, কাস্টমসের জনবল ঘাটতির কারণে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হুমকির মূখে পড়েছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন জানান, জনবলের ঘাটতি রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে মালামাল খালাশে বিলম্ব হচ্ছে। বিষয়টি আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে লিখিতভাবে কয়েক দফা জানিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :