রাজশাহীর ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অপারেশন ‘সান ডেভিল’ শুরু

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘সান ডেভিল’ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরুর তিন মিনিট পরই কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলির শব্দ শোনা যায়। শব্দ পাওয়া যায় বিস্ফোরণেরও।
এদিকে জঙ্গি আস্তানার পাশে কেটে নেওয়া ধানখেতে এখনও পড়ে আছে পাঁচ জঙ্গির লাশ, যারা গতকাল সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহুতি দিয়েছেলেন। অভিযানের দ্বিতীয় দিনে এখন তাদের মরদেহগুলো উদ্ধারের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জঙ্গি আস্তানার চারপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকা এলাকায় উড়ছে লাল পতাকা। সকাল আটটার দিকে বিপুল সংখ্যক আস্তানাটির আশপাশে অবস্থান নিয়েছে।
রাতে যেসব পুলিশ সদস্য আস্তানা ঘিরে রাখার দায়িত্বে ছিলেন, সকালে তাদেরও সেখান থেকে চলে যেতে দেখা যায়। আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদেরও মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে যেতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ শাখার বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ১২ সদস্যের বোমা বিশেষজ্ঞ এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএমপির একজন উপ-কমিশনার।
বৃহস্পতিবার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও এক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিহত হওয়ার পর বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানোর জন্য এই বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছিল। তবে তারা আসতে দেরি করায় ওই রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়- শুক্রবার সকালে বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানো হবে। এই অভিযানের নাম হবে- ‘অপারেশন সান ডেভিল’। শুক্রবার সকালে এই অভিযান শুরু হলো।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, ‘অভিযান কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে। শেষ হতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, আমরা নিশ্চিত নই, বাড়ির ভেতরে জীবিত অবস্থায় কোনো জঙ্গি আছে কি না। আমরা এও জানি না, নিহত জঙ্গিদের শরীরে আরও কোনো বোমা আছে কি না।’
সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া কাউকে বাড়িটির আশপাশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। গণমাধ্যমকর্মীরা লাল পতাকার সীমানার বাইরে অবস্থান করছেন। এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর ভেতরের সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জঙ্গিরা এতে সাড়া না দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।
এছাড়া জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত হন। আর আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনার পর দুই নারীসহ পাঁচ জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহুতি দেয়।
তবে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুমাইয়া নামে এক নারী আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে জঙ্গি আস্তানার পাশ থেকে সুমাইয়ার দুই শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকাটাইমস/১২মে/আরআর/এমআর

মন্তব্য করুন