উন্নয়নকাজ হয় কাউন্সিলরদের না জানিয়ে
রাজধানী ঢাকার ওয়ার্ডগুলোর সমস্যা নিয়ে আমরা আয়োজন করেছি ‘ঢাকার সমস্যা’ নামে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের। তাতে তুলে ধরা হবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো। থাকবে সম্ভাবনার কথাও। আয়োজনের প্রথম পর্বে আজ থাকছে এলাকার উন্নয়নকাজে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ক্ষমতাহীনতার কথা।
লালবাগের একটি সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে। কিন্তু কাজটি খুবই নিম্নমানের হচ্ছে। হঠাৎ বিষয়টি দেখে ফেলেন ওই এলাকার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন। তিনি এটি দেখে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিষয়টি জানান। ভালোভাবে না করলে কাজ বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।
এরপর দীর্ঘদিন কাজটি বন্ধ ছিল। পরে এলাকার মানুষের ভোগান্তি দেখে কাউন্সিলর নিজেই ওই ঠিকাদারকে অনুরোধ করেন কাজটি শেষ করার।
এভাবে নিজের অক্ষমতার কথা জানিয়ে কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার আসলে কোনো ক্ষমতা নেই। আমি যেটুকু করেছি সেটা দায়িত্ববোধ থেকে। এলাকার মানুষের জনপ্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু আমার যদি কার্যকর ক্ষমতা থাকত তাহলে কিন্তু ওই ঠিকাদার এটি করতে পারত না।’
ক্ষমতা কোথায় কমে গেল? দেলোয়ার হোসেন জানান, আগে ঠিকাদারের বিল তুলতে স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বাক্ষর লাগত। এতে জবাবদিহি নিশ্চিত হতো। কিন্তু এখন আর ওই নিয়ম নেই। ফলে কাজ বুঝে নিতে ঠিকাদারকে চাপ দেয়ার সুযোগও থাকছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সাল পর্যন্ত এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। কাজের বিল তোলার জন্য স্বাক্ষর লাগত কাউন্সিলরের। কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই ব্যবস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ কারা করছে, কী রকম করছে সে বিষয়ে দেখভাল করতে পারছেন না কাউন্সিলররা। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে খারাপ কাজের বদনাম তাদের ঘাড়েই চাপছে।
জানতে চাইলে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর সমীর বলেন, আগে প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের স্বাক্ষরে ঠিকাদাররা কাজের বিল তুলতেন। কাজের ভালোমন্দ যাচাইয়েরও সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। কারা এলাকায় কাজ করছে সেটিও আমরা জানি না। ফলে কাজের মান যাচাইয়েরও সুযোগ নেই।’
মীর সমীর বলেন, ‘এখন কাজ হয় প্যাকেজে। কয়েকটি ওয়ার্ড একত্র করে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে ওই ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকাজ হয়। এটি নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশন। আমার ওয়ার্ডে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজ চলছে।’
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা দরকার। তা না হলে নিবিড় কাজ হয় না। কাজের মান ভালো হয় না। কাজের মান ভালো করার জন্য কাউন্সিলরদের কার্যকর ক্ষমতা থাকা উচিত, যেন ঠিকাদাররা যেনতেন কাজ করতে না পারে।’
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, ‘কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। কারণ কাউন্সিলররা এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের অনেক দায়িত্ব ও জবাবদিহি থাকে।’
এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘২০০১ সালে একজন কাউন্সিলরের যে ক্ষমতা ছিল সেটি কিন্তু এখন নেই। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মনিটরিং এবং মানুষের সেবা করার সুযোগ আরও বাড়ানোর জন্য কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিল্লাল শাহ বলেন, ‘কাউন্সিলরদের হাতে উন্নয়নমূলক কাজ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ক্ষমতা থাকলে মনমতো কাজ করা যেত।’ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি এলাকাটি সাজাতে। ওয়াসার কারণে অনেক সমস্যা হয়।’
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান পিল্লু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দুঃখের। কারণ আমরা স্থানীয় জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এলাকায় কাজ হয় কিন্তু আমরা জানি না। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কোনো বিষয়ে আমাদের অবগত করা হয় না। আগে আলোচনা করে এলাকার কাজের এস্টিমেট করা হতো। এখন আর সেটি নেই। ঠিকাদাররা সমন্বয় করে কাজ করে না। তারা তাদের মতো করে কাজ করে। ফলে জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না। তারপরেও আমি নিজ উদ্যোগে আমার এলাকার কাজ মনিটরিং করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী সাহাবুদ্দিন আহমদে মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘আপনি অফিস টাইমে ফোন করেন। অফিস টাইমের পরে আমি কথা বলি না।’
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/মোআ)