নির্বাচনকালে ইসির পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ চাইবে বিএনপি

নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য ইসির সঙ্গে সংলাপে জোর দেবে বিএনপি।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে সংলাপের জন্য দলটির প্রস্তাবমালা চূড়ান্ত হয়নি এখনো। তাতে কোন কোন বিষয় তুলে ধরা হবে তাও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। শীর্ষ নেতাদের নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষে প্রস্তাবের বিষয় নির্ধারণে খসড়া তৈরির কাজ চলছে।
লন্ডনে অবস্থানরত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের অনুমোদনের পর প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে দলটি।
ইসির ঘোষিত নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী গত ৩০ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপের দিন ধার্য রয়েছে। ১৮ অক্টোবর ইসির সংলাপ হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
বিএনপিদলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কীভাবে পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে জোর দেবে বিএনপি। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, সংসদীয় আসন এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণের বিষয় থাকবে তাদের প্রস্তাবমালায়।
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্ণ আশ্বাস আদায়ের চেষ্টা করবে দলটি।
জানা গেছে, মধ্য জুলাই থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করা খালেদা জিয়া ইসির সঙ্গে সংলাপের প্রস্তুতির বিষয়ে দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে শুক্রবার গুলশানের কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে সংলাপে সম্ভাব্য প্রস্তাবের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহসহ কয়েকজনকে। বৈঠকের আলোচনাসহ পুরো খসড়াটি পরে লন্ডনে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরতে পারেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবের খসড়া লন্ডনে নাও পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য।
ইসির সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নিশ্চয়ই সংলাপে কোন কোন বিষয় আলোকপাত করা হবে তা নিয়ে প্রস্তাব তৈরি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
চেয়ারপারসনের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে আলোচনা হবে- জানতে চাইলে ড. মোশাররফ বলেন, ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলতে পারেন। চেয়ারপারসন সংলাপের আগে দেশে চলে এলে তার কাছে প্রস্তাবের খসড়া পাঠানোর প্রয়োজন হবে না।’
সংলাপে বেগম খালেদা জিয়ার অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানান বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। প্রস্তাবে কোন কোন বিষয় আসবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি নন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক আলোচনা করেছি। এখনো বেশ কিছু দিন সময় আছে। এর মধ্যে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা শেষে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।’
বিএনপির প্রস্তাবে কোন কোন বিষয় থাকবে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছি। আমরা চাই সরকার সেই দাবি মেনে নেবে। নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা কীভাবে প্রয়োগ করতে পারে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের দাবি এবং পরামর্শ দিতে পারি। সেনা মোতায়েনের দাবি তো অনেকেই করেছে। আমরাও অনেক আগে থেকেই এটা বলে আসছি। এ ছাড়া পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্র তৈরি করতে ইসির কাছে আমরা প্রস্তাব তুলে ধরব। তবে এ বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক আলোচনায় রয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তো নিশ্চয়ই সংলাপের জন্য প্রস্তুতি নেব। কিন্তু সেটা এখন প্রাথমিক অবস্থায় আছে। গতকাল বৈঠক হলেও আমি অংশ নিতে পারিনি। যে কারণে বিস্তারিত বলা সম্ভব না।’
অন্য এক প্রশ্নে গয়েশ্বর বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নির্বাচন কীভাবে হবে কি হবে না, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহারের ইচ্ছা তাদের আছে কি না সেটা। কারণ তাদের হাতে তো অগাধ ক্ষমতা। ইসি যদি শক্ত থাকে তাহলে প্রশাসন তাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে। তাই ইসি কীভাবে কাজটি করতে পারে সেদিকে জোর দিতে হবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন তো ফরজ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন