সৌদি-ইসরাইল গোপন সম্পর্কের নেপথ্যে

সৈয়দ রশিদ আলম
 | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৩৬

১৪ নভেম্বর খালিজ অনলাইন, ইয়েনি সাফাক ও আল-জাজিরা অনলাইন পত্রিকায় সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শায়েখ এক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন- ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হারাম। একই সাথে তিনি ইসরাইলবিরোধী যেকোনো আন্দোলনকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

এই বিবৃতির পর বিশ্ববাসী নানা ধরনের প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করছে। সঙ্গত কারণে ইসরাইল এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসরাইলের যোগাযোগ মন্ত্রী এক টুইট বার্তায় সৌদি গ্র্যান্ড মুফতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাকে ইসরাইল সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ইসরাইল তাকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করবে।

হামাস গেরিলা গ্রুপ যারা প্রায় ৪০ বছর থেকে বর্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববাসী হামাসের পক্ষে থাকলেও শুধু ইসরাইল ও তার কিছু মিত্র দেশ হামাসের বিরোধিতা করছে। কিন্তু সৌদি আরব কোনোদিনই হামাসকে সমর্থন করতে পারেনি মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন চলে আসে সৌদি আরব কেন হামাসকে সমর্থন না করে ইসরাইলকে সমর্থন করছে।

সবাই জানেন সৌদি আরবে যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা মূলত রাসুল (সা.) এর বিরোধী শক্তি আব্দুল ওহাব নজদির প্রতিষ্ঠিত মতবাদ। এই মতবাদীরা যারা ওহাবি তারা সুন্নিদের মুসলমানই মনে করে না। পৃথিবীর সবচাইতে ভোগবাদী সরকার হচ্ছে সৌদি সরকার, নারী নির্যাতন, বিদেশে শত শত কোটি ডলার পাচার, ব্যভিচার সৌদি রাজ পরিবারের স্বাভাবিক ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে নতুন শক্তি ইরানকে কাবু করতে কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল পারছে না। যে কারণে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সৌদি আরব সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

সৌদি আরব জানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার রাজতন্ত্র আর থাকবে না। যে কারণে সেখানে মুসলমানদের যতটা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় ইহুদিবাদী ইসরাইলকে তার থেকে শতগুণ বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।

সৌদি আরবের পাশের দেশ ইয়েমেনে সৌদি আরব প্রতিদিন বিমান হামলা চালাচ্ছে। সেখানে শত শত মসজিদ, মাদ্রাসা এই বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে। হাজার হাজার নর-নারী, শিশু নিহত হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরব বিশ্ব বিবেকের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। সেই সাথে নির্যাতিত প্যালেস্টাইনদের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি সৌদি আরব পৌঁছার পর হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা করেন। কোনো দেশে গিয়ে অন্য কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের কোনো নজির নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ গেরিলাদের উৎখাত করা। এই গেরিলা গ্রুপকে যেহেতু ইরান সমর্থন করছে সে কারণে সৌদি আরব হিজবুল্লাহ গ্রুপকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে।

উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদি আরব নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যার সময় সৌদি আরব নীরবতা পালন করেছিল। তার কারণ একটাই প্রভু ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করা সৌদি আরবের পক্ষে সম্ভব না। যে দেশগুলো মুসলিম না সে দেশগুলো ফিলিস্তিনবাসীকে অর্থ দিয়ে, খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে ব্যতিক্রম সৌদি আরব। তারা আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনবাসীকে কোনোভাবে সহায়তা করেনি। কারণ একটাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এই দুটি দেশকে অসন্তুষ্ট করে রাখা সৌদি আরবের পক্ষে সম্ভব না।

কারণ কী? সৌদি আরবে এক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নিষ্ঠুরতা চলছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বৈরশাসক সৌদি আররেব বাদশাকেই বলা হয়। বর্তমান সৌদি বাদশা সালমান তার পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য রাজ পরিবারের একাধিক সদস্যকে জেলে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরাধ তাদের তারা দুর্নীতিবাজ। মজার ব্যাপার হলো, সৌদি বাদশা নিজেই একজন প্রথম শ্রেণির দুর্নীতিবাজ। একাধিক কেলেংকারিতে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। যারা বিদেশের বিভিন্ন দেশে গোপনে অর্থ পাচার করছেন তাদের মধ্যে সৌদি বাদশা সালমান অন্যতম।

বিশ্ব বিবেক সবসময় অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে। একটি মাত্র মুনাফিক দেশ সৌদি আরব যদি পিঠে ছুরিও মারে তারপরও বিশ্ববাসী ফিলিস্তিনবাসীকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক প্রাবন্ধিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :