ঢাকায় হামলা চেষ্টার আগেই ধরা চার ‘জঙ্গি’

প্রতীক ওমর, বগুড়া
| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:০৭ | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:১১

ঢাকায় জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে চারজনকে আটকের কথা জানিয়েছে বগুড়ার পুলিশ। আটকদের একজন উত্তরাঞ্চলের নব্য জেএমবির সামরিক প্রধান বাবুল মাস্টার বলেও জানিয়েছে বাহিনীটি। তারা জানায়, আগেভাগেই তারা ধরা পড়ায় রাজধানী শহর একটি রক্তাক্ত হামলা থেকে বেঁচে গেছে।

বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বগুড়ার মোকামতলা বাজারের পাশ থেকে সন্দেহভাজন এই জঙ্গিদের আটক করে পুলিশ। বাবুল মাস্টার ছাড়া ধরা পড়া বাকি তিন সন্দেহভাজন জঙ্গি হলেন মিজানুর রহমান, আলমগীর ওরফে আরিফ, আফজাল ওরফে লিমন।

আটকের সময় তাদের কাছে থাকা একটি পিস্তল, ১৫টি গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি চাপাতি এবং চারটি চাকু উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তারা রাজধানীর কোথায় হামলা করতে চেয়েছিল, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বাবুল মাস্টার ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলমের পর নব্য জেএমবির উত্তরবঙ্গের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই বাবুল মাস্টার এবং মিজান ঢাকায় অ্যাটাকের পরিকল্পনা করেছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই তারা ওই রাতে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পেরে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’

উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবির সামরিক প্রধান হিসেবে চিহ্নিত বাবুল মাস্টার দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কসবা সাগরপুর জালেপাড়ার বাসিন্দা। তিনি ২০০৩ সালে জেএমবিতে যোগ দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২০১৩ সাল পর্যন্ত গোটা উত্তরাঞ্চলে ওই সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসেন বাবুল। ২০১৪ সালে তিনি নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। রাজীব গান্ধি ওরফে জাহাঙ্গীর আলম গ্রেপ্তারের পর নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের নেতৃত্বে আসেন বাবুল। সাংগঠনিক কাজে দক্ষতা এবং বিশ্বস্তবতার পরিচয় দেয়ায় ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি শুরা সদস্য হন। সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ, সদস্য সংগ্রহ, হামলার টার্গেট, ব্যক্তি ও স্থান নির্ধারণ করতেন তিনি। তার নির্দেশেই ঘটতো বিভিন্ন স্থানে হত্যা।

২০১৬ সালের ২৫ মে গাইবান্ধা জেলার মহিমাগঞ্জের আলোচিত জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক হত্যায় বাবুল জড়িত ছিলেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

আটক মিজানুর রহমান আরও একটি নামে পরিচিতি। সেটি হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলোয়ার মিস্ত্রি। বগুড়ার শেরপুরের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরইল আছির হাজীপাড়া।

মিজানের নারী পুরুষ সবাই জঙ্গি গোষ্ঠীটির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। মিজানের চার ভাই ও ভাতিজা খায়রুল ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হয়। মিজানের ছোট ভাই গত মাসের ১৬ তারিখে নওগাঁর আত্রাই থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে মিজান ২০০৫ সালে তার বড় ভাই ইউসুফ হাজীর মাধ্যমে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই সংগঠনের হয়ে নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জুনুদ আত তাওহীদ আল খিলাফা’য় যোগ দেন তিনি। ২০১৪ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাঘমারা থানার আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিজানকেই চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ওই হামলায় তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন নাঈম জড়িত ছিল বলেও জানিয়েছে বাহিনীটি। তিনি ২০১৬ সালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

২০১৫ সালে মিজান বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার জোয়ানপুর কুঠিরভিটা গ্রামে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলেন বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এ সময় তিনি এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালক হিসেবে আসেন। তাকে স্থানীয়রা সিএনজি চালক হিসেবেই চিনত। ওই গ্রামের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গোলাবারুদে ভরে ফেলেন। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ওই আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে জুয়েল এবং ফারদিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ফাঁস হয়ে যায় ওই আস্তানার কার্যক্রম।

উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ ওই আস্তানায় সে সময় যাতায়াত ছিলো জেএমবির প্রথম সারির নেতাদের। নব্য জেএমবির শীর্ষ পদে থাকা তামিম চৌধুরী, মারজান, সাগর, রাজীব গান্ধী, বাবুল মাস্টার, রিপন, কাওসার, ওসমান, মমিন, রজবসহ অনেক নেতাই এখানে নিয়মিত আসতেন। এখানে বসেই উত্তরাঞ্চল নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতেন তারা।

২০১৫ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলায় ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ওই আস্তানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।

ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :