৪৬ বছর পর শ্রীপুরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:১৯

দেশ স্বাধীন হওয়ার মাস দুয়েক আগে বর্বর পাকিস্তানিরা পরাজয় আঁচ করতে পেরে সারাদেশের মত গাজীপুরের শ্রীপুরেও হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। মুক্তিকামী মানুষদের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত পাক বাহিনীর ক্যাম্পে এনে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত, বাদ যেত না নারীরাও। পরে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের মাঠের পাশে বিশেষ জায়গায় শহীদ মৃতদেহের ঠাঁই হতো।

এভাবেই পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে শ্রীপুরের সাতখামাইর ও মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের দুটি গণকবর। যা দীর্ঘ ৪৬ বছর অবহেলায় থাকার পর অবশেষে সংস্কারসহ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সাতখামাইর গ্রামের তরুণ মুক্তিযোদ্ধা রহিমউদ্দিন আকন্দ পাকবাহিনীর ব্যবহৃত ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের সাতখামাইর এলাকার রেললাইনের একটি পিলার উঁড়িয়ে দেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকবাহিনী প্রতিশোধে মরিয়া উঠে। ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই স্থানীয় রাজাকার নওয়াব আলীর দিক নির্দেশনায় রাতের বেলা ট্রেনে করে আসেন পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। রাজাকারদের সহযোগিতায় সাতখামাইর গ্রামে ঢুকে পড়েন। শুক্কুর আলীর ছেলে আতর আলী ও তার বাড়িতে বেড়াতে আসা ইউসুফ আলীকে আতর আলীর ঘরের পাশেই কাপড় দিয়ে বেঁধে দাঁড় করান। এসময় আশেপাশের বাড়ি থেকে ধরে আনা হয় সাতখামাইর রেল গেটম্যানের ছেলে মনির, এলাকারই ছনা পাগলা ও কান্দু মুন্সীকে। কান্দু মুন্সী তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। আর মনিরের নববিবাহিত অপরুপা সালেহা বেগমকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীপুর ক্যাম্পে। সেখানে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় সালেহাকে। সালেহার স্থান শ্রীপুর গণকবরে হলেও অন্যান্যদের কবর দেয়া হয় আতর আলীর পারিবারিক কবরস্থানে। একইভাবে শ্রীপুরের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য শ্রীপুর ক্যাম্পে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় উজিলাব গ্রামের ওমর আলী প্রধান, আব্দুস সামাদ, লিয়াকত আলী মিয়া, কেওয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার ভাঙ্গী, একই গ্রামের আব্দুল খালেক পালোয়ান, আলমগীর বাদশা আকন্দ, ভাংনাহাটি গ্রামের শুক্কুর আলী, সাতখামাইর গ্রামের আব্দুল লতিফ, আব্দুস সাত্তার, সালেহা বেগম ও শিরিন আক্তারকে। তাদের প্রত্যেকের মৃতদেহ শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের গণকবরে সমাহিত করা হয়। আর একইভাবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক সাদির আকন্দকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানিরা। আজো মৃতদেহের সন্ধান পায়নি তার পরিবার।

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদ সাদির আলী আকন্দের ছেলে নূরুন্নবী আকন্দ জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রীপুরে রয়েছে নানা ধরনের ইতিহাস। বর্বর পাকিস্তানিদের হাতে শাহাদাৎবরণ করেন অনেকেই। পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই এই কলেজের সভাপতি এডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয়ের উদ্যোগে শ্রীপুরের গণকবরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার কাজ শিগগির শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার জানান, বর্তমান সরকার মহান মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। শ্রীপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দুটি গণকবর রয়েছে। ইতোমধ্যেই সাতখামাইর গণকবরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি গণকবরে মুর‌্যাল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :